সবখানে বাংলা ভাষা চালুর দাবি ভাষা সৈনিক ফজলুর রহমানের

ভাষা সৈনিক ফজলুর রহমানের

১৯৫২ সাল। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে উত্তপ্ত ঢাকার রাজপথ। একইসময় গোপালগঞ্জেও আন্দোলন গড়ে তোলেন বেশ কয়েকজন ছাত্র। তাদের মধ্যে ছিলেন এ এম ফজলুর রহমান। তিনি তখন ৭ম শ্রেণির ছাত্র। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দ্লোন করার অপরাধে কিশোর বয়সেই কারাভোগ করতে হয় এ ভাষা সৈনিককে। জীবন সায়াহ্নে একটাই দাবি তার, ‘সর্বত্র চালু হোক বাংলা ভাষা’ ।

ভাষা সৈনিক এ এম ফজলুর রহমান স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর গুলিবর্ষণের খবর গোপালগঞ্জে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্কুল-কলেজে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসব আন্দোলনের সম্মুখভাগেই থাকতেন এ এম ফজলুর রহমান।

১৯৫৪ সালে শহরের ব্যাংকপাড়াস্থ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ঐতিহাসিক আম বাগানে বাঁশ ও কাগজ দিয়েদ একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এ অপরাধে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে ফরিদপুর সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান তিনি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর একই দাবিতে সভা-সমাবেশ ও আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এ ভাষা সৈনিক।

লেখাপড়া শেষ করে ১৯৬৩ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু (তৎকালীন কায়েদ-ই-আযম মেমোরিয়াল) কলেজে হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯২ সালে প্রধান হিসাবরক্ষক হিসেবে অবসরে যান তিনি। বর্তমানে তিনি ছেলেদের সঙ্গে শহরের পাওয়ার হাউজ রোডের বাসায় বসবাস করেন। বয়স এখন ৮৪। অনেকটাই সুস্থ আছেন তিনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় আর নাতি-নাতনি ও প্রতিবেশিদের সঙ্গে ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ও কারাভোগের গল্প করে সময় কাটে এ ভাষা সৈনিকের।

জীবন সায়াহ্নে এসে কোনও চাওয়া-পাওয়া না নেই জানিয়ে এ এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘এখন আমার শুধু একটাই দাবি সর্বত্র চালু হোক বাংলা ভাষা।’