কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার ৯টিতেই রয়েছে হাওর। এসব এলাকার একমাত্র ফসল বোরো ধান। গত বছরও হাওরে মাঠের পর মাঠ জুড়ে ছিল ধান আর ধান। এবছরে যতদূর চোখ যায় অনাবদি জমি চোখে পড়ে। গত কয়েক বছরে আগাম বন্যা ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষক। গত বছর বাম্পার ফলনের পরও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আর এ লোকসানের কারণে হাজার হেক্টর জমি পতিত রয়েছে এ অঞ্চলে।
ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, এক কাঠা জমিতে ধান চাষ করতে যে খরচহয় ফসল বিক্রি করে তা ওঠে না। উল্টো লোকসান গুণতে হয়। ঋণ করে চাষাবাদ করেও টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। তাই এবার চাষ হয়নি। লাভ না পেলে ধান চাষ করা সম্ভব নয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তাহলে আমাদের পক্ষে বোরো আবাদ করা সম্ভব হবে না।
প্রতিবছর বোরো চাষ করার খরচ জোগাতে ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন কৃষকরা। ধান চাষে লোকসান হওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন। আবার অনেকে জমি বিক্রি করেও ঋণ পরিশোধ করেছেন। তাই খাওয়ার জন্য অল্প জমি চাষ করে বেশির ভাগ জমিই অনাবাদি রেখেছেন অনেকে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আশোক পারভেজ বলেন, ‘ইতোমধ্যে ধানের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ জেলার অধিকাংশ উপজেলা হাওরবেষ্টিত। তাই এখানে প্রতিবছরই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আসছে। কিন্তু গত কয়েকবছর বিভিন্ন কারণে এ এলাকার কৃষকরা ধানের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। তাই কৃষকরা যাতে লাভবান হয় তার জন্য বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা, সরিষা ও সূর্যমুখী আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’