নৌকাই এখন রান্নাঘর

নৌকার ওপর চলছে রান্নাজাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া গ্রামের পারভীন বেগমের রান্নাঘরটি ১৫ দিন আগেই পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর কয়েক দিন থাকার ঘরে রান্না করলেও ১০ দিন ধরে সেখানেও পানি ওঠে। তাই নিজেদের নৌকাটিকেই এখন রান্নাঘর বানিয়ে নিয়েছেন। সারা দিন নৌকাতেই রান্না করেন, নৌকাতেই খান। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) বিকালে সরজমিন গিয়ে কথা হয় পারভীন বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পানি বাড়তে থাকায় তাদের কষ্টের শেষ নেই। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। খাবার পানি সংগ্রহ, রান্না করা, সবকিছুই এখন কষ্টসাধ্য।

তবে চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের এসবের চাইতেও বড় সমস্যা হচ্ছে খাদ্য সংকট। পারভীন বেগমের স্বামী দিনমজুর হাশেম শেখ করোনার কারণে তিন মাস কর্মহীন ছিলেন। এখন নতুন করে বন্যা হওয়ায় সব কাজ বন্ধ। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারকর্জ করে কোনও রকমে চলছেন। কিন্তু তাতেও দু-একদিনের বেশি চলবে না। এরপর দুটি বাচ্চাসহ না খেয়ে থাকতে হবে তাদের। হাসেম শেখ-পারভীন বেগম দম্পতির মতো একই অবস্থা সামসুল হক ভূইয়া, রাশিদা বেগম, ওমর মাঝি, সুলতান আকনসহ চরাঞ্চলের অনেক দরিদ্র পরিবারের।

জাজিরার মাঝিকান্দি গ্রামের শামসুল হক ভূইয়া বলেন, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের পাঁচ জনের সংসার। করোনার কারণে কাজ কম থাকায় এমনিতেই কষ্ট করে চলছিলাম। বন্যা হওয়ায় আরও বেশি সমস্যায় আছি। ঘরের ভেতর হাঁটুপানি। বাড়িতে চারটি ছাগল পালন করতাম। পানিতে সব ডুবে যাওয়ায় ছাগলগুলো ঘরে এনে রেখেছি। তাদের খাবার জোগাড় করতেও কষ্ট হচ্ছে।

অনেক দূর থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে আসছেন এক নারীজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার চারটি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে পদ্মা ও মেঘনা বেষ্টিত। এর বাইরে আরও পাঁচটি ইউনিয়নের অংশবিশেষ চারদিকে নদীবেষ্টিত। এসব চরাঞ্চলে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের বসবাস। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় দুই লক্ষ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদের অধিকাংশই দরিদ্র পেশাজীবী। করোনা এবং বন্যার কারণে চরাঞ্চলের এসব মানুষ চরম বিপাকে রয়েছেন। 

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, বন্যাদুর্গতদের জন্য এখন পর্যন্ত ৬৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যাদুর্গতদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে।