জীবনযোদ্ধা তিন ভাই

1আরাফাত সানী, শাকিল ও সাইম। স্কুলপড়ুয়া তিন ভাই গরু বা গবাদি পশু ছাড়াই জমি আবাদ করে ধানের চারা রোপণ করেছে। জমি তৈরির জন্য ট্রাক্টর ভাড়ায় চাষের পরবর্তী সকল ধাপ নিজেরাই করেছে। এক ভাইকে মইয়ের ওপর বসিয়ে দুই ভাই মই টেনে কাদামাটি সমান করেছে।
এভাবে ৩৫ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করে এলাকার মানুষের কাছে তারা আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাদের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা (উত্তরপাড়া) এলাকায়।
তাদের মা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার ৩ সন্তান। আরাফাত সানী টেংরা নওয়াব আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মেজ ছেলে শাকিল পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে হাফেজি মাদ্রাসায় পড়ছে। ছোট ছেলে সাইম প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের বাবা তোফাজ্জল হোসেন শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় চা’য়ের দোকানি। সরকারি গেজেটভুক্ত ৩৫ শতক জমিতে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। বছর খানেক আগে ৭০ হাজার টাকায় প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৩৫ শতক শাইল জমি ঋণ গ্রহণ করেন। বছরে দু’বার জমিতে ধান আবাদ করেন। ৬ সদস্যের পরিবারে কৃষি উপকরণ বলতে তেমন কিছু নেই। একটি ষাঁড় ও একটি বকনা বাছুর রয়েছে। চলতি মৌসুমে ওই জমিটুকু আবাদের জন্য বাড়ির পাশে ধান ছিটিয়ে বীজতলা তৈরি করেন। মঙ্গলবার তার ছেলেরাই জমিতে পানি সেচ দেয়। পরে ট্রাক্টর ভাড়া করে চাষ করে নিজেরাই মই দিয়ে জমি তৈরি করে।2
আরাফাত সানী জানায়, গরু ও কৃষি উপকরণ না থাকায় ছোট ভাইকে মইয়ের ওপর বসিয়ে রশি লাগিয়ে মই টেনে চাষ করা জমির কাদামাটি সমান করে। পরে মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয়দের সহায়তায় তিন ভাই মিলে জমিতে ধানের চারা রোপণ করে। বুধবার দুপুরের আগে ধানের চারা লাগানো শেষ হয়।
স্থানীয় সমাজসেবী রাব্বানী বলেন, পরিবারটি একটি সৎ পরিবার। পরিবারের গৃহিণী বাড়ির পাশে মৌসুমি কিছু শাকসবজির আবাদও করে থাকে।
প্রতিবেশী মনোয়ার হোসেন বলেন, তোফাজ্জলের শিশু সন্তানেরা ছোটবেলা থেকেই কষ্ট সহিষ্ণুতার শিক্ষা পেয়েছে। এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা তাদের এ কাজটিকে ইতিবাচক ও শিক্ষণীয় হিসেবেই দেখছি।