একজনকে কুপিয়ে আরেকজনের গায়ে গরম পানি ঢেলে দাপট প্রদর্শন

নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে একদল সন্ত্রাসী এলাকায় তাণ্ডবে চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা কাঞ্চন পৌরসভার কালাদি এলাকায় আব্দুর রহমান (৩০) নামে এক যুবককে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে এবং নাঈম নামের আরেক যুবককে ধরে এনে শরীরে গরম পানি ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। তাদের দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উভয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অভিযুক্তরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলির অনুগত বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। গোলাম রসুল কলি স্বীকার করেছেন, তার সমর্থকরা দুজনকে মারধর করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে রবিউল, শান্ত, মতিউর, ইসলাম উদ্দিন, মনজুর আলম, বাবু, রোবেল, টুটুল, নির্জন, আলা-আমিন, মাহফুজ, শাকিল, আতাউর, কাকন,মাছুম,আলমগীর, ইমনসহ এক দল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। এসময় তারা প্রতিপক্ষের সমর্থক কাঞ্চন বাজার এলাকার মন্ডলের বাড়ির সামনে কালাদি এলাকার মৃত শহিদুল্লার ছেলে আব্দুর রহমানকে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এরপর তারা বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে স্থানীয় সুকুমারের বাড়ির সামনে থেকে রানীপুরা এলাকার মৃত সিদ্দিক ভুইয়ার ছেলে নাঈম ভুইয়াকে তুলে নিয়ে গিয়ে শরীরে গরম পানি ঢেলে ঝলসে দিয়ে মধ্যেযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে আটকে রাখে। পরে তাদের স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে। দুইজনকেই মুমূর্ষু অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনার পর কলি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা কাঞ্চন পৌরসভা কার্যালয়সহ কাঞ্চন বাজার এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয়। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভয়ে আতঙ্কে দোকানপাটের শাটার বন্ধ করে দোকানের ভেতরে অবস্থান নেয়। সকালে কাঞ্চন বাজারের ব্যবসায়ী তোফায়েল আহাম্মেদের বাড়িতে সশস্ত্র মহড়া দেয়। এদিকে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের খবর পেয়ে ভোলাবো তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালিয়ে সটকে পড়ে।

কাঞ্চন পৌরসভার সামনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসহ প্রকাশ্যে মহড়ার ছবি।

স্থানীয়রা আরও দাবি করেন, এর দুদিন আগে কালাদি এলাকায় অবস্থিত এফ খান ফিলিং স্টেশনের সামনে ফেলে কলি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পশ্চিম কালাদি এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে শাহিন মিয়া ও ত্রিশ কাহানিয়া এলাকার আব্দুল আলীর ছেলে রিফাতকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক ও কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলির মধ্যকার আধিপত্য বিস্তার, চাদাঁবাজির ভাগ-বাঁটোয়ারা এবং জমি বেচাকেনা, জমি বালু দিয়ে ভরাট করাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তাদের এই বিরোধের জের ধরে এক পক্ষ আরেক পক্ষের সমর্থক ও কর্মীদের মারধর করছে। বর্তমানে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মানুষ ভয়ে বাজারে আসতে পারছে না।

এ ব্যাপারে কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, আমি চাই কাঞ্চন পৌরসভাকে শান্ত রাখতে। কিন্তু পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক গোলম রসুল কলি চায় অশান্ত করতে। সোমবার যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। প্রশাসন যেন কোনও সন্ত্রাসীকে ছাড় না দেয়। আমি যদি অন্যায় করে থাকি আমার বিরুদ্ধেও যেন ব্যবস্থা নেয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম রসুল কলির মোবাইল ফোনে জানান, গত রবিবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশের উদ্যোগে ঐতিহাসিক সাত মার্চের অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমি যোগ দেই। অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পথে পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিকের লোকজন আমার দুই সমর্থক নাজমুল ও তোফাজ্জলকে কুপিয়ে জখম করে। এরই জের ধরে সকালে আমার সমর্থকরা বাজারে সেভ করতে আসা প্রতিপক্ষের দুইজনকে মারধর করেছে বলে শুনেছি।

তিনি বলেন, রাজনীতি ছেড়ে দেবো ভাবছি। এভাবে প্রতিদিন মারামারি আর ভালো লাগে না।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার (ওসি ) মহসিনুল কাদির জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পৌরমেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই জের ধরে দুইজনকে বাজারে মারধর ও শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করেছে সন্ত্রাসীরা । পুলিশ দুপুর থেকে সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।