হাসপাতালটাই না ধসে পড়ে মাথার ওপর!

করোনার আতঙ্ক তো আছেই, সেই সঙ্গে ভয়, কখন আবার গোটা হাসপাতালটাই না ধসে পড়ে মাথার ওপর! গত শনিবার শরীয়তপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের নিচতলার রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ার পর এমনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের সবার মাঝে।

জানা গেল, গতবছর ১৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহমদ খানের কক্ষের ছাদের পলেস্তারাও ভেঙে পড়েছিল। কক্ষটির সংস্কার না হওয়ায় এখনও সেটা ব্যবহার করতে পারছেন না তিনি।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আক্তার হোসেন বললেন, ১০ এপ্রিল (শনিবার) সকালে কক্ষের তালা খুলে দেখি ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ে আছে। এক্সরে মেশিনের ওপরও একটা অংশ পড়েছে। বিকল্প নেই। তাই এই কক্ষই রোগীদের ব্যবহার করতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) হাসপাতালের ওই বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগটি নিচতলার দুটি কক্ষ নিয়ে অবস্থিত। একটি কক্ষের ছাদের অধিকাংশ পলেস্তারাই খসে পড়েছে। কিছু কিছু ঝুলে আছে। ওই অবস্থাতেই রোগীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে কক্ষের সামনে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহমদ খান বলেন, ‘১৯৮৫ সালে হাসপাতালটির দোতলার কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালে হয় তৃতীয় তলা। সংস্কারের অভাবে এখন গোটা হাসপাতাল ভবনটিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে পাঁচ দফায় বিভিন্ন ফ্লোরের পলেস্তারা ভেঙে পড়েছে। ২০১৮ সালেও নিচতলার করিডোরে পলেস্তারা ভেঙে তিনজন আহত হয়েছিলেন। গতবছর আমার কক্ষেও পড়েছিল। তখন অল্পের জন্য বেঁচেছি। গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা ভবনটি পরীক্ষা করেছেন। এখন নিচতলা সংস্কার না করে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে এটি ছিল ৩০ শয্যার। ১৯৯০ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এরপর ২০০৩ সালে হয় ১০০ শয্যা। ভবনের ভিত দুর্বল থাকার পরও ১৬টি অতিরিক্ত পিলার স্থাপন করে তৃতীয় তলার বর্ধিত অংশের নির্মাণকাজ করা হয়।

হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ছাদের অনেক জায়গায় ফাটল আছে। অনেক কক্ষ দিয়ে পানিও পড়ে। এমন অবস্থায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আতঙ্ক নিয়ে অফিস করছি। ফার্মেসি বিভাগের কক্ষের ছাদে ও ভিমে ফাটল ধরেছে।’

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘নিচতলায় বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ, আরএমওর কক্ষ, এক্সরে রুম, ল্যাবরেটরি ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করার কক্ষ রয়েছে। ছয়টি কক্ষ এই মুহূর্তে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে কাজ করা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ জানালেন, হাসপাতালের ভবনটি বেশ পুরনো। এটাকে ২৫০ শয্যার করা হবে। এ জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতাল প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।