আড়াই বছর ধরে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় সাত খুনের মামলা

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের সাত বছর পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল)। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাত খুনের মামলাটির রায়ের পর উচ্চ আদালতে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আড়াই বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হওয়ায় মামলাটির শুনানি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আদালতের একটি সূত্র।

তবে মামলাটির আপিল বিভাগে শুনানি শেষ না হওয়ায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী সাত খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। এদিকে নিহতের সাতটি পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে বর্তমানে তারা চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন। আসামিদের একজন সরকারের সাবেক এক মন্ত্রীর জামাতা।

সাত খুনে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাত খুন মামলায় রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। উচ্চ আদালত থেকে সাত খুনের আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দণ্ডাদেশসহ যে রায়টি হয়েছে তা যেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকে।

সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাত খুনে সাতটি পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবার এখন চরম অর্থকষ্টে দিনাদিপাত করছে।

সাত খুনে নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন বলেন, সাত খুন মামলায় উচ্চ আদালতের রায়টি সুপ্রিমকোর্টে যেন বহাল থাকে সে আশা করছি এবং রায়টি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

নিহত তাজুল ইসলামের পিতা আবুল খায়ের বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি কবে সাত খুন মামলাটির রায় কার্যকর হবে। আমরা এ মামলার রায় কার্যকর দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। কারণ সাত খুনে নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের বাবা সাত খুনের মামলাটির রায় দেখে যেতে পারলে না। তিনি গত বছর মারা গেছেন।

তিনি আরও বলেন, নিহত সাত খুনের ৫টি পরিবার এখন খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এই ৫টি পরিবার এখনও চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছে। প্রধানমন্ত্রী এই ৫টি পরিবারকে যদি সহায়তা প্রদান করতেন তবে আমরা একটু উপকৃত হতাম।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাত খুন মামলাটি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনে সাত খুন মামলায় যে সাজাটি বহাল রেখেছেন সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসের কারণে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই এ মামলাটি এখন একই অবস্থায় রয়েছে।