একসঙ্গে ৬ কোটি টাকার গরু বিক্রি করবেন এরশাদ

রাজধানী ঢাকায় ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে ভালোই চলছিল মোহাম্মদ এরশাদ উদ্দিনের। তবে করোনা এসে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন ঘটায়। পরিবার নিয়ে এরশাদ ফেরেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। তবে বাড়ি ফিরে বসে থাকেননি তিনি। ২০টি গরু নিয়ে গড়ে তোলেন খামার। স্বপ্ন বুনেন জীবনকে মেরামত করার। অর্গানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করা এরশাদের গরুর খামারে এখন ২৫০টি গরু ও মহিষ রয়েছে। সামনের কোরবানির ঈদে ছয় কোটি টাকার গরু বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন তিনি। আর এর থেকে কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে ধারণা তার।

উদ্যোক্তা ও খামারি এরশাদ বলেন, কোরবানির জন্য সুস্থ, সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান পশুর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। এ চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই গড়ে তুলি গরু-মহিষ মোটা তাজাকরণের খামারটি। মাত্র ২০টি গরু দিয়ে শুরু হলেও, বর্তমানে খামারটিতে রয়েছে ২৫০টি গরু-মহিষ। এখান থেকে সামনের ঈদে ১২০টি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কোরবানির জন্য গরু-মহিষ কিনতে দূর-দূরান্তের লোকজন ভিড় করছেন। ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় এবার খামার থেকে কোটি টাকা মুনাফার আশা করছি।

এরশাদের খামারের নাম জেসি অ্যাগ্রো। তিনি বলেন, খামারের সবচেয়ে বড় গরুটির নাম ব্ল্যাকডায়মন্ড। ঈদের আগে ৯০০ কেজি ওজনের গরুটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রির কথা চলছে। এছাড়া খামারের সবচেয়ে কম ৪০০ কেজি ওজনের গরুটির দাম ধরা হয়েছে তিন লাখ। গড়ে প্রতিটি গরু ছয় লাখে বিক্রির হিসাবে ছয় কোটি টাকার বেশি আয় হবে। এর থেকে কোটি টাকার মুনাফার আশা করছি।

এরশাদের গরুর খামারএরশাদ আরও বলেন, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন খামারে এসে গরু দেখছেন। ঈদের জন্য অনেকে আগেভাগে বুকিং দিয়েও রাখছেন। ফোন কিংবা অনলাইনেও কথা হচ্ছে অনেকের সঙ্গে। ফলে পশু বেচার জন্য কোনও হাট-বাজারে নেওয়ার ঝক্কি থাকবে না। মানুষের কাছে ভেজালমুক্ত মোটা-তাজা গরু কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যেই জেসি অ্যাগ্রো কাজ করছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হেলিম মিয়া জানান, খামারটিতে ভুট্টা দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার, সাইলেস খেতে দেওয়া হয় গরু-মহিষকে। আর এ সাইলেসও কেনা হয় না বাজার থেকে। কৃষকদের কাছ থেকে গাছসহ ভুট্টা কিনে খামারেই বানানো হয় এ পশুখাদ্য। ফলে এসব প্রাণি লালনপালনেও খরচ পড়ছে অনেক কম। আর এখানকার কর্মীরাও অনেক দক্ষ। অসুখ-বিসুখে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহযোগিতা নেওয়া ছাড়াই খামারের প্রশিক্ষণ প্রাপ্তকর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসার কাজটা সামাল দেন।

খামারের পশু খাবারের সার্বিক তত্বাবধানে থাকা মো. সাইদ আল সাহাব বলেন, খামারে বর্তমানে ১৫০টি ষাড়, ৪০টি মহিষ ও ৬০টি গাভী রয়েছে। এখানে লাল, খয়েরি, সাদা ও কালো রঙের বিভিন্ন জাতের ষাড় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেশিজাত ছাড়াও ব্রাহামা, শাহীওয়াল, হারিয়ানা, গয়াল, নেপালি, ইন্ডিয়ানবইল উল্লেখ্যযোগ্য। এগুলো ছয় মাস থেকে এক বছর ধরে পোষা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এরশাদের খামার স্থানীয় বেকার ও যুবকদের আশা দেখাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এই খামার দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন তারা। অনেকে খামার পরিদর্শন করে কীভাবে শুরু করা যায়, তারও পরামর্শ নিচ্ছেন। খামারে স্থানীয় ২০ যুবকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এরশাদের গরুর খামারএছাড়া এলাকায় আগে ভুট্টা চাষ তেমন হতো না, এখন পশু খামারকে ঘিরে কৃষকরা ভুট্টা চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে খামারটি।

এরশাদের খামার ও অর্গানিক পদ্ধতিতে পশু পালনের বিষয় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি খামারটি পরিদর্শন করেছি, খুব সুন্দর ও পরিপাটিভাবে গুছানো একটি খামার। আমাদের পক্ষ থেকে খামারের সার্বিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি খামারের কর্মীদেরকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অর্গানিক পদ্ধতিতে দেশীয় শংকরজাতের গরু-মহিষ লালনপালন লাভজনক। পাশাপাশি এগুলোর মাংসও মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ বলে জানান তিনি।