করোনার কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা করটিয়া হাট। কাপড়ের বান্ডিল নিয়ে বসে রয়েছেন বিক্রেতা, কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। গত তিনদিনে হাটে একজন ব্যবসায়ী মাত্র ১২টি কাপড় বিক্রি করতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া করোনার সংক্রমণ বাড়ায় জেলায় জেলায় লকডাউনে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে বলে ধারণা করছেন শাড়ি ব্যবসায়ী ও তাঁতিরা।
জানা যায়, দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ কাপড়ের হাট করটিয়া। তুলনামূলকভাবে কম দাম ও বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ির প্রাপ্তিস্থান হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভারতের পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ীদেরও অন্যতম পছন্দ এই হাট। দেশে করোনার প্রথম ঢেউয়ের লকডাউনে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো করটিয়া হাটটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হাট আবার চালু করে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান।
বর্তমানে দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্নস্থানে ফের লকডাউন চলছে। দেশের বিভিন্নস্থান ও দেশের বাইরে থেকে পাইকাররা হাটে শাড়ি কিনতে আসতে পারছেন না। সামনে কোরবানির ঈদ। আর ঈদকে কেন্দ্র করেও গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এই তিনদিনে বড় পাইকারের দেখা পাননি ব্যবসায়ীরা। হাটে খুচরা ক্রেতাও ছিল চোখে না পড়ার মতো।
ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও দেশের বাইরে থেকেও পাইকাররা আসতো শাড়ি কিনতে। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় লকডাউন থাকায় এখন তারা আসতে পারছেন না। ফলে করটিয়া হাট প্রায় ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে একজন ব্যবসায়ী প্রায় পাঁচ লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু গত তিনদিনে হাটে মাত্র ৫০ হাজার টাকারও কাপড় বিক্রি করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির কারণে আমরা যারা ব্যবসায়ী তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিবারের খরচ বহন করাও আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
শাড়ি ব্যবসায়ী মনির ভূইয়া বলেন, ‘টানা তিনদিনের হাটে মাত্র ১২ পিছ শাড়ি বিক্রি করতে পেরেছি। আমার খরচের টাকাও উঠেনি। স্বাভাবিক সময়ে তিনদিনে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো কাপড় বিক্রি হতো। এই লকডাউনে আইসা এখন ডাউনে পড়ে গেছি। পাইকার ও খুচরা ক্রেতারাও হাটে আসেনি। হাটে ক্রেতাশূন্যই বলা চলে।’
করটিয়া হাট কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিন্নাহ বলেন, প্রথম লকডাউনে প্রাচীন এই করটিয়া হাটটি বন্ধ ছিল। এখন চালু হলেও করোনার ভয়ে হাটে মানুষ আসছে না। লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার আসতে পারছেন না। এজন্য হাটে শাড়ি বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। এখন ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের যে ক্ষতি হয়েছে এটা অপূরণীয়। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারি সহায়তা চান তিনি।