দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা ধরে পুড়ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানা। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। এদিকে আগুনের ঘটনায় ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে দুই নারী শ্রমিকসহ তিন জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৪৩) মোরসালিন (২৪)। নিহত স্বপ্না হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গুলডুবা এলাকার যতীন সরকারের স্ত্রী ও নিহত মীনা কিশোরগঞ্জের কমিরগঞ্জ উপজেলার উত্তরকান্দা কুকিমাদল গ্রামের হারুনের স্ত্রী। তারা উভয়ে কারখানার ওডি সেকশনের শ্রমিক বলে নিশ্চিত বরেন সেখানকার অপারেটর আজিজ মিয়া।
এছাড়া আগুনে আহত হয়েছেন আরও প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখনও বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনরা ফ্যাক্টরির আগুনের সামনে এসে অপেক্ষা করছেন। যদিও এই নিখোঁজের সংখ্যা কত তার কোনও তালিকা প্রস্তুত করেনি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, আগুনের ঘটনায় কতজন এখনও নিখোঁজ আছেন তার একটি তালিকা প্রস্তুুত করার জন্য উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মধ্যে তালিকা তৈরির কাজ চলছে। যারা নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনরা দাবি করছেন তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। একইসঙ্গে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদেরও একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছেন।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সেখানে কার্টন ও ফুড ইউনিটের ৫ তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ করে আগুনের সুত্রপাত ঘটে। এসময় আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কালো ধোঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছুটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করে। এসময় ছাদ থেকে লাফ দিয়ে স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৪৩) নামের দুই নারী নিহত হন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন।
প্রতিষ্ঠানটির এডমিন ইনচার্জ সালাউদ্দিন মিয়া জানান, সেকশনের পাঁচটি ফ্লোরে চারশ' শ্রমিক বিকালে ওভারটাইম করছিলেন। সে ভবনের উপরের ফ্লোরে আমাদের স্টোর। সেখানে কয়েক কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল আল আরিফিন বলেন, সজিব করপোরেশনের সেজান জুস কারখানার ভবনটি অনেক বড়। কিন্তু এই ফ্যাক্টরিতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার ফাইটিংয়ে ব্যবস্থা ছিল খুবই অপ্রতুল। এছাড়া বিশাল আকৃতির ভবনটিতে উঠা-নামা করার মাত্র দুটি সিঁড়ি ছিল। ভবনটিতে কমপক্ষে চারটি সিঁড়ি থাকার প্রয়োজন ছিল।