২১ বছরেও সংস্কার হয়নি আশ্রয়ণের ঘর 

টিনের চালে ধরেছে মরিচা। কোনও কোনও স্থানে ফুটো হয়ে গেছে। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলেই পানি পড়ে ঘরের ভেতর। নিরুপায় হয়ে ঘরে টানানো হয়েছে পলিথিন। তারপরও পানি পড়ে। ঘরের বেড়ার টিন, কাঠ, দরজা ও জানালার নাজেহাল অবস্থা। কাটে নির্ঘুম রাত। জরাজীর্ণ ঘরে কষ্টে বসবাস করছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৯০ পরিবার। ২১ বছর ধরে এসব ঘরে বসবাস করছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে দুস্থ ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। হাতিঘাটা বাজারের পশ্চিম পাশের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০০ পরিবার এবং পূর্ব পাশে ৯০ পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারের জন্য তৈরি ৪৬টি শৌচাগারের অবস্থা বেহাল।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর জরাজীর্ণ। টিনের চালে মরিচা ধরে ফুটো হওয়ায় ঘরে পানি পড়ে। প্রায় প্রতিটি ঘরে পলিথিন টানিয়ে বাস করেন বাসিন্দারা। ঘরের বেড়ার টিন মরিচা ধরে ভেঙে পড়ছে। টিনের দরজা ও জানালার বেহাল অবস্থা।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা রাবিয়া খাতুন বলেন, ‘ঘরে পানি পড়ে। পলিথিন টানিয়েছি, তাতেও কাজ হয় না। রাতে বৃষ্টি এলে জেগে থাকতে হয়। একবার কর্মকর্তারা এসে মেরামতের জন্য তালিকা করে নিয়ে গেলেও আর হয়নি।’ 

আরেক বাসিন্দা ভারতী রানী সন্ন্যাসী বলেন, ‘ঘর ভেঙে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই জল পড়ে। খুবই কষ্টে আছি আমরা।’

প্রকল্পের (পশ্চিম পাশের) সভাপতি মো. খোরশেদ বলেন, ‘এই প্রকল্পে ১০০ পরিবারের বাস। নির্মাণের পর থেকে ঘরগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বারবার চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেননি। মেরামতের অভাবে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বৃষ্টি এলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে।’

প্রকল্পের (পূর্ব পাশের) সভাপতি মো. ইসমাইল বলেন, ‘এখানে ৯০ পরিবারের বসবাস। নির্মাণের পর আর ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে। টয়লেটগুলো ব্যবহার অনুপযোগী।’

ঝড়বৃষ্টি শুরু হলেই পানি পড়ে ঘরের ভেতর

আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি ঘরই মেরামত করতে হবে। সবগুলো ঘরের অবস্থা বেহাল।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্প দুটি আমার দফতরের অধীনে নির্মিত হয়েছে কিনা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। যদি আমার দফতরের অধীনে নির্মিত হয়, তাহলে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তথ্য দিলে আমরা সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে ঘরগুলো মেরামত করা করা হবে।’

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘সরকার যখন আশ্রয়ণ প্রকল্প করে দেয়, একবারেই দেয়। যখন তাদের আশ্রয়ণ করে দিয়েছিল তখন থেকে এখন পর্যন্ত তারা সক্ষম ও স্বাবলম্বী হতে পারেনি, বিষয়টি দুঃখজনক। তাদেরও কর্মক্ষম হতে হবে, সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যদি তাদের জীবনমানের উন্নয়ন না হয়, মানবেতর জীবনযাপন করে সেক্ষেত্রে নতুন কোনও প্রকল্পে কিছু করা যায় কিনা, সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ করবো।’