ছাত্রলীগের পদ পেতে অছাত্র ও হত্যা মামলার আসামির দৌড়ঝাঁপ

পড়াশোনা ছেড়েছেন দীর্ঘদিন, আবার কেউ প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি, তারাই এখন চাচ্ছেন আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ। পদ পেতে ইতোমধ্যে জেলা দফতরে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা, শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ।

জানা যায়, থানা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়ার ৭ মাস পর গত (১২ সেপ্টম্বর) নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য পদপ্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। এর পর থেকেই সাবেক ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতারা নতুন করে পদে আসার জন্য দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার সুবন্দি এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে নাদিম ২০১৫ সালে থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। অভিযোগ রয়েছে পদ পাওয়ার পর পূর্ব শত্রুতার জেরে শাহিন নামের এক যুবককে ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে পরের দিন মামলা (নম্বর- ১২৬) দায়ের করেন। পরে গ্রেফতার হয়ে কয়েক বছর জেলেও খাটেন ওই নেতা। অবশেষ সিআইডি তদন্ত করে এই বছরের ২৫ জুলাই ছাত্রলীগ নেতা নাদিমকে সেই মামলার প্রধান আসামিসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেয়। 

এদিকে কয়েক বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি জামিনে বের হলেও বাদ দিয়েছেন পড়াশোনা। কয়েক বছর ধরে নেই তার ছাত্রত্ব। তবে নতুন কমিটি হওয়ার খবর পেয়েই চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি নাদিম থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

হত্যা মামলার অভিযোগপত্রঅভিযুক্ত নাদিম বলেন, ছয় মাস আগে জামিনে এসেছি। সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য এখনও জীবন বৃত্তান্ত জমা দেইনি, তবে জমা দেবো। 

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে। তবে নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কথাও জানান তিনি।

অন্যদিকে শিমুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জিতু। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে বিবিএতে ভর্তি হলেও পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। তবে থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির তোড়জোড়ে তিনিও ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। 

নিজের প্রার্থিতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, দুই-একদিনের মধ্যেই জীবনবৃত্তান্ত জমা দেবো। তবে পড়ালেখা বন্ধ থাকলেও নতুন করে ভর্তি হবেন বলেও জানান ওই নেতা। 

ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বিবাহিত, ছাত্রত্ব নেই বা চার্জশিটভুক্ত আসামিরা যদি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসে তাহলে কমিটি বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে। এছাড়াও গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করেই বলা আছে, বিবাহিত বা ছাত্রত্ব নেই এমন কেউ পদে তো দূরের কথা সদস্যই তাকতে পারবে নান। আর চার্জশিট ভুক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামির সভাপতি পদে আসা সম্ভব নয়। 

ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে যোগ্য লোকদের নিয়ে আসা হবে। বিবাহিত বা ছাত্রত্ব নেই এমন কেউ এই কমিটিতে জায়গা পাবে না। আর কোনও হত্যা মামলার আসামির পদ বা সদস্য হওয়ার কোনও সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।