পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মুক্তমনে দান করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এ কারণেই মসজিদটি সারা দেশের মানুষের কাছে আলাদাভাবে পরিচিত। এখানকার দানবাক্স খোলা মানেই কোটি কোটি টাকা। এবার মসজিদের বাক্স খুলে পাওয়া গেলো তিন কোটিরও বেশি টাকা, যা এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বাক্স খোলার পর সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গণনা শেষে সেখানে তিন কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের ১৯ জুন শেষবারের মতো খোলা হয়েছিল মসজিদের দানবাক্স। তখন আটটি বাক্সে সবমিলিয়ে পাওয়া গেছে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। চার মাস পর শনিবার বাক্স খোলার পর মসজিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার খবর পাওয়া যায়।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও কিশোরগঞ্জ শাখা প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাগলা মসজিদের হিসাব দেখভাল করার সুযোগ পেয়ে তারা গর্বিত। আমরাই মসজিদের এ টাকা গণনা থেকে শুরু করে ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করি। দেশি টাকা ছাড়াও ছিল বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।’

pagla-masjid1

সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। এরপর এগুলো ১২টি বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় গণনার কাজ শুরু হয়। এখানকার জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০০ জন টাকা গুনছেন। টাকার বস্তাগুলো একে একে ঢেলে দেওয়া হয় তাদের সামনে। এভাবে সারাদিন চলে টাকা গণনার কাজ।

এ কাজ তদারকি করেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট (এডিএম) ফারজানা খানম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল ইসলাম, শিহাবুল আরিফ, অর্ণব দত্ত, মো. মাহমুদল হাসান ও পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া।

pagla-masjid4

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম বললেন, ‘এটি আসলে দেখার মতো ঘটনা। মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে কোটি কোটি টাকা দান করেন। থাকে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও। টাকা-পয়সার সঙ্গে চিঠিপত্রও। এগুলো মহান আল্লাহর উদ্দেশে লেখা। এবার তিনটি চিঠি পাওয়া গেছে,  যেগুলোতে রোগ-শোক থেকে মুক্তি, আয়-উন্নতি বৃদ্ধি ছাড়াও শত্রুতা থেকে রেহায় পেতে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে।’ 

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা জানান, মাদ্রাসার ১২৭ ছাত্র, মসজিদের ৩৪ কর্মচারী ও রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সারাদিন টাকা গণনা করেছেন। যারা মসজিদে টাকা গণনার কাজে সহযোগিতা করেন, তাদের জন্যও থাকে সম্মানীর ব্যবস্থা।

pagla-masjid3

মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, ‘মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়াও দানের টাকায় দুস্থ ও অসহায়দের নানাভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়। দুরারোগ্য রোগীদের চিকিৎসায় অনুদান দেয় এই মসজিদ। সম্প্রতি শত কোটি টাকায় এই মসজিদের বহুতল কমপ্লেক্স নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দানের টাকা দিয়ে এই প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হবে। মসজিদের তহবিল থেকে করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতিও।