এমপিওর দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তকরণের দাবিতে দেশের বিভিন্ন কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গাজীপুরের বোর্ড বাজারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত দেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজের নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসে জড়ো হন। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত দেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে কর্মরত সাড়ে পাঁচ হাজার নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষককে এমপিওভুক্তির দাবি জানান। 

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।

বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সারা দেশের বিভিন্ন কলেজে অনার্স-মাস্টার্সের নন-এমপিও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। বেসরকারি কলেজসমূহে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকদের জনবলে অন্তর্ভুক্ত না থাকার অজুহাতে দীর্ঘ ২৯ বছর থেকে এমপিওভুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষ তা দিচ্ছে না। অথচ একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়ে সদ্য জাতীয়করণকৃত কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকরা ক্যাডার-নন-ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন, ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকরা জনবলে না থাকার পরও এমপিওভুক্ত হয়েছেন। মাস্টাসের্র সমমান কিংবা কামিল শ্রেণির শিক্ষকরাও এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অথচ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এনটিআরসিএর সনদধারী হয়েও জনবল ও এমপিও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না, যা বৈষম্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী।

ফেডারেশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলেন, দীর্ঘ ২৯ বছর থেকে পেশাগত দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার পরও আমরা সরকারি বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাধ্যমে শিক্ষাখাতে অনেক বৈষম্য কমেছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় উচ্চশিক্ষাদানে নিয়োজিত সারা দেশের সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক এখনও এমপিওভুক্তির বাইরে রয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে প্রচলিত জনবল কাঠামো সংশোধন করে এমপিওভুক্তি চাই, বেঁচে থাকার সুযোগ চাই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষকদের এই আন্দোলন অযৌক্তিক। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি অনার্স ক্লাসের শিক্ষক নিয়োগ প্রদানকালে শর্তই থাকে যে, নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রচলিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রদান করবে। বেতন-ভাতা ও এমপিওভুক্তির জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসে আন্দোলন করা অযৌক্তিক। তারপরও শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে শুনেছি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, শিক্ষকরা সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান করেছেন। তারা শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।