‘আমি কারে মা কমু, ও আরোহী রে...’

‘আমি কারে মা কমু, ও আরোহী রে, ও স্মৃতিরে...। তিন দিন ধইরা মা কইতে পারি না। লঞ্চে আসতে না করছিলাম, কথা শোনে নাই। আমার ভুল হইছে, তোগো কেন যাইতে দিছিলাম। আমার এখন কি হইবো?’

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) শীতলক্ষ্যার পাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ের নিথর দেহের পাশে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন বাবা জয়রাজ বংশী। উদ্ধার কাজের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে বন্দরের হরিপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট ঘাট থেকে নিখোঁজ আরোহীর (৩) লাশ উদ্ধার হয়। 

এর আগে, রবিবার লঞ্চ ডুবির ঘটনায় প্রথম দিন আরোহীর বোন স্মৃতি রানীর লাশ উদ্ধার করা হয়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ইসমানির চর এলাকায় স্মৃতি ও আরোহীর বাড়ি। তারা দু’জনে হোলি অনুষ্ঠান উপলক্ষে শুক্রবার বন্দর একরামপুরে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। পরে বাড়ি ফেরার পথে লঞ্চডুবিতে তার মৃত্যু হয়। 

এদিকে ভাগনি আরোহীর লাশ নিয়ে ট্রলারে কাঁদছেন শিপ্রা বর্মন। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে বেড়াতে না এলে আজ লাশ তাদের হতো না। আমি এখন বোনকে কি জবাব দেবো?

তিনি আরও বলেন, লঞ্চে করে বাড়ি ফিরতে না করেছিলাম, কথা শোনেনি। এখন আমার দুই ভাগনি শেষ। 

রবিবার (২০ মার্চ) দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় এমভি রূপসী-৯ নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চের ১৫ থেকে ২০ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। লঞ্চটিতে প্রায় অর্ধ-শতাধিক যাত্রী ছিল বলে বেঁচে ফেরা কয়েকজন যাত্রী দাবি করেন। ঘটনায় প্রথম দিন ছয় লাশের মধ্যে স্মৃতি রানীর লাশ রয়েছে। তৃতীয় দিন সকালে আরোহীর লাশ উদ্ধার হলো।

দুর্ঘটনার তৃতীয় দিন পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ৯ জনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া একটি লাশ লঞ্চডুবির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে জানানো হয়েছে।