শরীয়তপুরে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেডের চেয়ে চার গুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের কর্মীদের। চিকিৎসকরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, বিশুদ্ধ পানি পান না করা এবং আবহাওয়া পরির্তনের কারণে রোগী বেড়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়েছে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় মেঝে ও হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৪৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১৪ জনের বেডের বিপরীতে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে ৬০ জন।

জানা গেছে, ১০০ শয্যার শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনিসহ ৯টি ওয়ার্ডের ৮০টি শয্যায় পুরুষ ও নারী রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ২০ শয্যায় করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে ৮০টি শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ২২০ জন রোগীকে। অন্যদিকে বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০ চিকিৎসকের বিপরীতে ৩৮ জন কর্মরত।

এদিকে চিকিৎসক সঙ্কটে ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। এছাড়া হাসপাতালের পরিবেশও ভালো না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়েছে

সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন থেকে আসা সামিউল আক্তার বলেন, ‘দুই দিন আগে ডায়েরিয়ার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছি। তবে এখানকার পরিবেশ ভালো না।’

বেদে পল্লী থেকে আসা ঝর্ণা আকতার জানান, ‘আমরা একই পরিবারের তিন জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়েছি। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মঝেতে আছি। এতে আমাদের থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

নড়িয়া থেকে আসা আব্দুর রহিম বলেন, ‘হাসপাতালে এসেছি সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে যে পরিবেশ, এতে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছি। বেড পাইনি। মেঝেতে রয়েছি। দুটি মাত্র টয়লেট রয়েছে। তার অবস্থাও করুণ।’

সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ সেলিনা আক্তার জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোমানা বলেন, ‘বেশি রোগী থাকলে দুজন এবং কম থাকলে একজন নার্স রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে রয়েছে ১৪টি বেড, তবে রোগী সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাদের মেঝেতে রাখতে হচ্ছে।’

মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মো. শরীফ উর রহমান বলেন, ‘আমি কখনও ডায়েরিয়ার এত রোগী ভর্তি হতে দেখিনি। মানুষ অসেচেতন, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করার কারণে, আবহাওয়া পরিববর্তন এবং হঠাৎ রোজার পর খাবার পরিবর্তন হওয়ায় এটা হতে পারে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’