বিয়ের দাবিতে কনস্টেবলের বাড়িতে অবস্থান নেওয়ায় তরুণীকে নির্যাতন

গাজীপুরের শ্রীপুরে পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেওয়ায় তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১৭ মে) বিকালে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের সোনাব গ্রামের পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তরুণীকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার তরুণী কাওরাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। প্রেমিক জাহাঙ্গীর আলম একই ইউনিয়নের সোনাব গ্রামের মোহাম্মদ ছাত্তার ঢালীর ছেলে। তিনি কনস্টেবল পদে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনসে কর্মরত।

ভুক্তভোগী তরুণী জানিয়েছেন, পাঁচ বছর ধরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক। গত ঈদের ছুটিতে জাহাঙ্গীর বাড়িতে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন। তখন বিয়ের কথা বলেন তরুণী। এরপর থেকে জাহাঙ্গীর যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় বিয়ের দাবিতে ৬ মে বিকালে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অবস্থান নেন। তার উপস্থিতি টের পেয়ে জাহাঙ্গীর পালিয়ে কর্মস্থল চট্টগ্রামে চলে যান।

তিনি বলেন, ‘বিয়ের কথা বলায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে জাহাঙ্গীর। বাধ্য হয়ে তার বাড়িতে চলে আসি। ১২ দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি। জাহাঙ্গীরের পরিবারের লোকজন আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। ঠিকমতো খাবার দেয়নি। এতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তখন ধামলই বাজারের ফার্মেসি মালিক কামাল হোসেন ও জাহাঙ্গীরের ফুফু মঙ্গলবার বিকালে আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। আমাকে অচেতন অবস্থায় উঠানে ফেলে রাখে তারা।’

এ বিষয়ে কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তার সঙ্গে ফেসবুকে আমার পরিচয় হয়। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে আমাদের যোগাযোগ হতো। এরই মধ্যে বিয়ের দাবিতে আমার বাড়িতে অবস্থান নেয়। তাকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি। তার বিষয়ে আমার পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে।’

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলম খান বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানে দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসা হয়েছিল। ছেলের পরিবারের কোনও প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় সমাধান করা যায়নি।’

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, ‘বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার সুযোগ নেই। ওই তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। তাকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি আমরা।’

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ‘বিয়ের দাবিতে কেউ কারও বাড়িতে অবস্থান নিলে তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। লিখিত অভিযোগ না পেলে আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না।’

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরশাদ হোসেন বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরের বাইরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন তরুণী। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’