২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাস্তবায়ন হওয়া দেশের সবচেয়ে বড় এ সেতু ঘিরে আগ্রহ এখন সবার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই সেতু দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ভ্রমণপিপাসু মানুষের চাহিদা মেটাতে সেতু সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, পার্কসহ নানা স্থাপনা।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন স্থানীয়দের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হবে। সেতু হওয়ার পর আদি পেশা বদলে এখন অনেকেই পর্যটনকেন্দ্রিক নতুন ব্যবসা কিংবা অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করছেন। নতুন উদ্যোক্তারা পর্যটকদের সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হোটেল-রেস্তোরাঁ। সেতু এলাকা ঘুরে ভ্রমণপিপাসু মানুষ রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাচ্ছেন। রয়েছে ভ্রাম্যমাণ ফাস্টফুড, ফুচকা, চায়ের দোকান। এগুলো পেয়ে সেতু দেখতে আসা মানুষও খুশি।
ভাঙ্গা থেকে সেতু দেখতে আসা আসলাম শেখ বলেন, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেতু দেখতে এসেছিলাম। সেতুতে উঠতে পারিনি, তবে দূর থেকেই দেখে আমরা খুশি। সেতু দেখে এসে রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খেলাম, ভালোই লাগছে। এখানে একটিই রেস্তোরাঁ। তবে খাবারের মান ও দাম ভালো। সবমিলে ভালো লেগেছে।
শরীয়তপুর সদর থেকে সেতু দেখতে আসা নাজমা আক্তার বলেন, মেয়ে বায়না ধরেছে পদ্মা সেতু দেখবে, তাই মেয়েকে নিয়ে এসেছি সেতু দেখাতে। ঘুরে-দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাই মেয়েকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় বসেছি। এখানে রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া দাওয়া করলাম।
তিনি আরও বলেন, এখানে রুটি, গ্রিল, কাবাবসহ চাইনিজ খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পদ্মার ইলিশ। আগামী ২৫ জুন সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আরও বিভিন্ন ধরনের খাবারের বিশেষ আয়োজন করা হবে। এছাড়া দূর দূরান্ত থেকে সেতু দেখতে আসা মানুষের রাতে থাকার জন্য আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
সেতু এলাকায় ভ্রাম্যমান ফুচকা বিক্রেতা সাইফুল শেখ বলেন, আগে ভ্যান চালাতাম। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণের পর ভ্যান চালানো বাদ দিয়েছি। এখন ঘুরে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করি। আগের চোয়ে রোজগারও ভালো হচ্ছে।
সেতু দেখতে আসা গোলাম মাওলা বলেন, পদ্মা পাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে সব বয়সের মানুষকেই। এই সেতু দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন পর্যটকরা। পদ্মার পাড় ও সেতুর আশপাশে নৌযানে ঘুরে মন ভরে দেখছেন স্বপ্নের সেতু। সেতুকে ঘিরে সরকারিভাবে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ফলে উত্তরবঙ্গের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ঠিক তেমনি পদ্মা নদীর উপর সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ফলে দক্ষিনাঞ্চল পর্যটন ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য স্পট নির্বাচন করছেন। এছাড়া ফরিদপুরে একটি ইকোনমিক জোন করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।