‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’

বাবা-মা নেই, স্বামী থেকেও নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে চলছিল সংসার। মাথা গোঁজার ঠাঁইও ছিল না। আমার বেঁচে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় স্বপ্নের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের পাকা দালান পেয়েছি। মাথা গোঁজার ঘরটি আমাকে বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে। উপহারের ঘর পেয়ে এভাবেই নিজের কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাউশা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা অঞ্জনা বেগম।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বীরপুশিয়া গ্রামের বাসিন্দা সিলিম উদ্দিনের পাঁচ মেয়ের মধ্যে অঞ্জনা বেগম সবার ছোট। বাবা-মায়ের সংসারে অভাব-অনটন থাকায় প্রায় ১৪ বছর আগে তার বড় বোনের টাঙ্গাইল শহরের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন অঞ্জনা। সেখানে পরিচয় হয় মধুপুর উপজেলার বাসিন্দা মনির হোসেনের সঙ্গে। এক পর্যায়ে মনির ও অঞ্জনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর পারিবারিকভাবে অঞ্জনা ও মনিরের বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় তিন বছর পর তাদের ঘরে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের কিছুদিন পর তারা জানতে পারেন শিশু সন্তানটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওই সময় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে শিশুটিকে চিকিৎসক দেখানো হয়। চিকিৎসকরা শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে আর ঢাকায় নেওয়া হয়নি। পরে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানকে স্ত্রী অঞ্জনার কাছে রেখে মনির অন্য এক নারীকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে মনির আর স্ত্রী-সন্তানের কোনও খোঁজ রাখেননি। 

চরম অসহায় অবস্থায় শিশু সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন অঞ্জনা। ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় শহরের একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি। ভিক্ষার টাকায় চলছিল ছেলের ওষুধ ও সংসারের খরচ। শিশু সন্তানের বয়স এখন প্রায় ৯ বছর। 

অঞ্জনা জানান, অসহায় সময়ে এক আত্মীয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে সেখানে যোগাযোগ করে তিনি মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের পাকা দালানটি পেয়ে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে নিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, ‘বাবা-মাকে হারিয়েছি দীর্ঘদিন আগেই। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বাবাও আমাদের রেখে চলে গেছে। এখন তিনি কোনও খোঁজখবর নেন না। প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ভিক্ষা করতে হয়েছে। আমার কোনও ভিটাবাড়ি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি পাকা দালান উপহার দিয়েছেন। এই ঘরটি পেয়ে আমি নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস পেয়েছি।’

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে এখন কাজ করে বেঁচে থাকতে চান তিনি। অঞ্জনা বলেন, প্রতিবন্ধী ছেলে ও আমাকে ফেলে স্বামী চলে যাওয়ায় অসহায় অবস্থায় ভিক্ষায় নেমেছিলাম। তবে এখন একটা কাজ পেলে সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার উপায় হতো। 

একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সঙ্গীতা সাহা বলেন, ‘অঞ্জনা তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেটি প্রায় সময়েই কান্না করে। তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পারাতে হয়। ওই ছেলেকে কোলে নিয়েই অঞ্জনা ভিক্ষা করে সংসার চালায়। একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে অঞ্জনা তার ছেলেকে নিয়ে চলতে পারতো।’ 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি বলেন, ‘জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। আরও ঘর উপহার দেওয়ার কাজ চলছে। ’

তিনি আরও বলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সেলাই মেশিন, গরু-ছাগল বিতরণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।