এক জেলার ৫৭৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কলাগাছ-বাঁশের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা

রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় ৭৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৬৯টিতে শহীদ মিনার আছে। বাকি ৫৭৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনও শহীদ মিনার নেই। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেন। শ্রদ্ধা জানান, স্মরণ করেন ভাষা শহীদদের।

রাজবাড়ী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টিতে শহীদ মিনার নেই। কলেজ রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে ৩০টি কলেজে নেই শহীদ মিনার। জেলায় ৭৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৭৩টিতে। 

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৩৪টি। ১৫টিতে শহীদ মিনার থাকলেও নেই ১১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গোয়ালন্দ উপজেলার ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫টিতে শহীদ মিনার নেই। পাংশা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২১টি। এর মধ্যে মাত্র সাতটিতে থাকলেও ১১৪টিতে শহীদ মিনার নেই। 

বালিয়াকান্দি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৯টি। এর মধ্যে ১০টিতে শহীদ মিনার আছে, তবে নেই বাকি ৮৯টিতে। কালুখালী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৬টি। এর মধ্যে ১৪টিতে থাকলেও ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

জেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানায়, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তাই স্কুলের মাঠে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে তারা। স্কুলে শহীদ মিনার থাকলে তাদের প্রতি বছর কলাগাছ দিয়ে তৈরি করতে হতো না।

সরকারের কাছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরির দাবি জানিয়ে এসব শিক্ষার্থী বলে, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। 

গোয়ালন্দ উপজেলার নবু ওছিমুদ্দিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার বলে, ‘আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। আমরা ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। একটা শহীদ মিনার থাকলে আমরা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম।’

উজানচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ বাবর আলী বলেন, ‘মাতৃভাষা, ভাষা শহীদদের সম্পর্কে জানতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখবে।’

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। তবে এলাকার কেউ নিজ উদ্যোগে শহীদ মিনার তৈরি করে দিতে পারেন।

রাজবাড়ী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাতৃভাষা দিবস পালন করতে অবশ্যই শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।’