‘ছেলের লাশ আনতে লাগবে ৪ লাখ টাকা, এত টাকা কহানে পাবো’

পরিবারের অভাব দূর করতে দেড় বছর আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫)। কিন্তু গত ২৬ মে এক সড়ক দুর্ঘটনায় রিয়াদে মারা যান তিনি। হতদরিদ্র পরিবার তার লাশটি দেশে ফিরিয়ে আনার অর্থ জোগাড় করতে পারছে না। 

অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মা এবং তিন শিশু সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী আহাজারি করে চলেছেন। তারা সরকার ও দেশের সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

জাহাঙ্গীর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল গ্রামের ইয়াছিন মোল্লার একমাত্র ছেলে। ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার অকাল মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।জাহাঙ্গীরের পরিবার জানায়, শুক্রবার (২৬ মে) বিকালে সৌদি আরবের রিয়াদে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে তাদের জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর ফোনে জানানো হয়।

তার বাবা ইয়াসিন মোল্লা জানান, রাজবাড়ী সদরের লালগোলা গ্রামে তাদের বাড়ি ছিল। তিন বছর আগে পদ্মার ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন রেললাইনের পাশে ৭ শতাংশ জায়গার ওপর বাড়ি করে বাস করছেন। তিনি বার্ধক্য ও অসুস্হতার কারণে কোনও কাজ করতে পারেন না। জাহাঙ্গীর দেশে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। কিন্তু তাতে সংসার চলতো না। ধারদেনা করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদি আরব পাঠানো হয়।

জাহাঙ্গীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীরের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা আহাজারি করছেন।

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী লিপি বলেন, ‘২৬ মে বেলা ১১টার দিকে ফোন করে শুধু বলেছিলেন, সবার দিকে খেয়াল রাইখো। কয়েকদিনের মধ্যে কিছু টাকা পাঠাবো। বিকেল ৫টার পর একজন ফোনে জানায়, সে এক্সিডেন্ট করেছে। এরপর শুনি আর বেঁচে নেই।’

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার মা রাবেয়া বেগম পাগলপ্রায়। তিনি কান্না করে বলছিলেন, ‘ওইদিন সকালে আমারে ফোনে শুধু বইলা গেল, মা আমি কাজে যাচ্ছি। এরপর আর কোনও কথা কইলো না। আমি কোথায় গেলে ব্যাটারে পাবো।’

বাবা ইয়াছিন মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলের লাশ চাই। কিন্তু লাশ আনতে নাকি ৪ লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা আমি এহন কহানে পাব? এহনো ৩ লাখ টাকা দেনা শোধ করতে পারি নাই। পাওনাদারদের টাকাই বা দিব ক্যামনে? আমি দেশের সরকার ও সামর্থ্যবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।’

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘পরিবারটি আমার কার্যালয়ে এসেছিল। সরকারি খরচে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।’