‘আমার স্বপ্নগুলো দামি ছিল’ লিখে কলেজশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

‘আমি জানি আমি কী করছি। জানি আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তু আমার কাছে যে, আমার স্বপ্নগুলো অনেক দামি ছিল। হয়তো আমার জীবনের চেয়েও দামি...।’ এভাবেই সুইসাইড নোট লিখে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ফিরোজ মোল্যা (১৮) নামে এক কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

সে ও তার ছোট ভাই ফাহিম মোল্যা (১২) উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামে নানাবাড়িতে থাকতো। বোয়ালমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল ফিরোজ। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে শোবার ঘর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সুইসাইড নোটে ফিরোজ আরও লেখেন, ‘আমরা যেই সমাজে বাস করি সেই সমাজে স্বপ্নপূরণ করতে অনেক টাকা নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন। যার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আমি ওকে ভালোবাসতাম। আমার আবেগমাখা কথাগুলো কারো বিবেকে লাগবে না, সেটা আমি জানি। আর আমি বোকা বলবো সেই সব মানুষদের যারা আমাকে একজন ভালো ছেলে ভাবতেন। আমি আসলে কখনোই ভালো ছিলাম না, শুধু ভালো থাকার অভিনয় করতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আর কোনও কষ্ট করতে, পেতে চাই না। তাই এই পথ বেছে নিলাম। আমাকে সবাই ঘৃণা করলেও যেন ভুলে যায়, এটাই আমার শেষ ইচ্ছা। চিরবিদায় সবাইকে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’

স্থানীয়রা জানায়, শৈশবেই ফিরোজের বাবা নিরুদ্দেশ হলে মা ফিরোজা বেগম তার বাবার বাড়ি চাপলডাঙ্গায় তাদের রেখে অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নানা-নানির মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী এক মামাকে নিয়ে তারা নানাবাড়িতেই বসবাস করতো। ফিরোজ পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দন্ত চিকিৎসকের সহযোগী ও কখনও নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতো।

পুলিশ জানায়, বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে সে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করে। পরে শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আড়ার সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ‘খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে।’