নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭

দুর্ঘটনাস্থলে স্বজনদের আহাজারি, এখনও বগিতে আটকা অনেকে

কিশোরগঞ্জের ভৈরব জংশনের কাছাকাছি গাইনাহাটি এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেন এগারো সিন্ধুর সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগিতে এখনও আটকা আছেন অনেকে। উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। তবে আশপাশের মানুষ ও স্বজনদের ভিড়ে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টদের। তাই উৎসুক জনতাকে মাইকিং করে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। 

সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের গাইনাহাটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কিশোরগঞ্জের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এ পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‌‘এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের বগিগুলো উদ্ধারে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত অবস্থায় ৫০-৬০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

আশপাশের মানুষ ও স্বজনদের ভিড়ে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টদের

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের জরুরি বিভাগে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।

ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. রাসেল জানিয়েছেন, এখনও অনেক যাত্রী আটকা পড়ে আছেন দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগিতে। হতাহতের সংখ্যা শতাধিক হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। ঢাকা থেকে বিশেষ উদ্ধারকারী দল ও রিলিফ ট্রেন আসছে। ইতোমধ্যে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তবে উৎসুক জনতার কারণে স্বজনদের ভিড়ে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টদের।

ভৈরব রেলস্টেশনের মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, ‘ঢাকা থেকে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন বিকালে ভৈরব স্টেশনে প্রবেশ করছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারো সিন্ধুর ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল। জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় এগারো সিন্ধুর ট্রেনের শেষের দুই-তিনটি বগিতে কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। এতে এগারো সিন্ধুর ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। ধারণা করছি, তিনটি বগিতে ১৮০ আসনের বিপরীতে অন্তত ২৫০ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

এখনও অনেক যাত্রী আটকা পড়ে আছেন দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগিতে

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একই সময়ে ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারো সিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ তিন বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিগুলো উল্টে যায়। মালবাহী ট্রেন সিগন্যাল না মানায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত আহত ৭০ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।’