জায়গা মাপতে গিয়ে সংঘর্ষ, ছেলেকে বাঁচাতে প্রাণ দিলেন মা

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামে গ্রাম্য সালিশ শেষে সংঘর্ষের ঘটনায় এক নারী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম রোকেয়া বেগম (৬২)। তিনি ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামের মৃত এবায়দুল্লাহ সরকারের স্ত্রী বলে জানা গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিসংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ভবেরচর ইউনিয়নের পৈক্ষারপাড় গ্রামের মৃত এবায়দুল্লাহ সরকারের ছেলেদের সঙ্গে চাচাতো ভাই মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের ছেলেদের বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হলেও তা সমাধান করা সম্ভব হয়নি পরবর্তীতে তা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে সমাধান করার কথা ছিল। তবে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে বাড়িতেই গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে সালিশ বৈঠক শুরু হয়। সালিশের রায়ে বিরোধপূর্ণ জায়গাটি মৃত এবায়দুল্লাহর ছেলেরা পাবে বলে রায় দেওয়া হয়। তবে জায়গাটি মেপে খড়ের গাদা সরিয়ে তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় কথা-কাটাকাটির জেরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে মারা যান মৃত এবায়দুল্লাহর স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

গ্রাম্য সালিশের বিচারক হান্নান সরকার বলেন, ‘সালিশে আমিসহ সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন, নান্নু মিয়া, মোশারফ হোসেন মিন্টুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলাম। বিষয়টি আমরা সমাধান করে দিয়েছিলাম। সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে সালিশ শেষ হওয়ার পর। তখন আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না।’

নিহতের ছেলে সোহেল সরকার বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই সজীব, মঞ্জু ও রাজিব মূলত আমাকে মারধর করছিল। আমার মা আমাকে বাঁচাতে আসলে তাকে কিলঘুষি ও লাঠিপেটা করে। আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

ঘটনা সম্পর্কে ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ মোহাম্মদ লিটন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচার হওয়ার কথা ছিল। তবে উভয়পক্ষ তাদের বাড়িতে সালিশ করার ব্যাপারে দাবি জানালে আমি সেখানে সম্মতি প্রদান করি। শনিবার বিকাল চারটার পরে খবর পেলাম গ্রাম্য সালিশের পরে জায়গা মেপে ভাগ-বাঁটোয়ারা করার সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এক নারী মারা গেছেন।’

এ ব্যাপারে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা.জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকালে হাসপাতালে একজন নারীকে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। তার গায়ে আঘাতের তেমন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

ঘটনার ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, ‘গ্রাম্য সালিশে সংঘর্ষের ঘটনায় এক নারী মারা গেছেন বলে খবর পেয়েছি। ঘটনার পরপর পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’