বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আখতারের ট্রাকে উঠলেন নৌকার বর্তমান এমপি

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ। ঘোষণা দিয়ে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আখতারুজ্জামানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে ভোটের মাঠে হাওয়া বদলে যেতে শুরু করেছে। কারণ নূর মোহাম্মদ দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ভোটারদের মাঝে তার প্রভাব আছে। 

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। নৌকা না পাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। অবশেষে নৌকা কিংবা দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার পক্ষে মাঠে নেমেছেন নূর মোহাম্মদ। 

আখতারুজ্জামানকে সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে এমপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থনের ব্যাপারে দলীয় কোনও বিধিনিষেধ নেই। তাছাড়া তিনি (আখতারুজ্জামান) সাহসী মানুষ। এলাকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণের স্বার্থে তাকে সমর্থন দিয়েছি। আওয়ামী লীগের অন্য দুই প্রার্থীকে আমার পছন্দ হয়নি। এ কারণে সামগ্রিক স্বার্থে আখতারুজ্জামানের পক্ষ নিয়েছি।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ বলেছেন, ‘তার এই সমর্থন নির্বাচনি মাঠে তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না।’

তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানকে জেতাতে নানা ধরনের তৎপরতা চলছে। যা বর্তমান এমপির সমর্থনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে এলো। এসব তৎপরতা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। অবশ্যই ভোটের মাঠে এর প্রভাব পড়বে। 

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-২। আসনটিতে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুল কাহার আকন্দ (নৌকা), আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র মো. সোহরাব উদ্দিন (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান (ট্রাক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আলেয়া (আম), গণফ্রন্ট পার্টির মীর আবু তৈয়ব মো. রেজাউল করিম (মাছ) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট পার্টির মো. বিল্লাল হোসেন (টেলিভিশন)।

এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগ ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়লেও অন্য তিন প্রার্থীর তৎপরতা দেখা যায়নি। দুই উপজেলায় তাদের একটি পোস্টারও চোখে পড়েনি।

এদিকে দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব উদ্দিন। তার প্রতীক ঈগল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আখতারুজ্জামানকে সমর্থন দেওয়া একটি ষড়যন্ত্র। বিএনপির সাবেক নেতাকে নির্বাচিত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে কয়েকটি পক্ষ। এতে ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত জড়িত। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসব কারণে শঙ্কায় ভুগছেন আমাদের দলের লোকজন।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, নূর মোহাম্মদ নৌকা প্রতীকে এমপি হয়েছিলেন। অথচ এবার মনোনয়ন না পেয়ে আখতারুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছেন। এর ফলে বর্তমান আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেকায়দায় পড়েছেন।

তবে এতে বেকায়দায় পড়ার কিছু দেখছেন না নৌকার প্রার্থী আবদুল কাহার আকন্দ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আশা করছি, সব বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। দিন শেষে নৌকার জয় হবে।’ 

অপরদিকে, বর্তমান এমপির সমর্থন পেয়ে উচ্ছ্বসিত আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে বর্তমান সংসদ সদস্যের সমর্থনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার সমর্থন পেয়েছি। এরই মধ্যে তার অনুগতরা আমার পক্ষে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শুধু এমপি নন, আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা ও জনপ্রতিনিধি আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। লোকজন যদি ভোট দিতে পারে আর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, আমি জয়ী হবো।’ 

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৪ জন, নারী ভোটার দুই লাখ ৪৫ হাজার ৮২৫।