মানিকগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ীর মৃত্যু, দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস (৫০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় তাকে কুপিয়ে জখম করেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন।

শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুদ্দুসের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মো. হারুন মিয়া (৩৮) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের আটিগ্রাম এলাকার মৃত রতন মিয়ার ছেলে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে সিংগাইর থানার এসআই আব্দুস সালাম ও এএসআই আজিজুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

রবিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তাদের জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানালেন সিংগাইর থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম। নিহত আব্দুল কুদ্দুস উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামের মৃত মিনাজ উদ্দিনের ছেলে। পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী কুদ্দুস মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর সমর্থক। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থক।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শনিবার সকাল ৭টার দিকে চান্দহর ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামে আবুল কালামের নেতৃত্বে মিলন মিয়া, জুবায়ের হোসেন, হাকিম আলী, আব্দুল জব্বার, সালাউদ্দিন, রাসেল মিয়া, আবুল হোসেন, আওলাদ হোসেনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ শাহিনুর ইসলাম ও ফারুকের ওপর হামলা চালায়। তাদের দায়ের কোপে শাহিনুরের বাঁ পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফারুক গুরুতর আহত হন। এরপর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। 

সংঘর্ষের খবর পেয়ে শান্তিপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আব্দুস সালাম মিয়া ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় আটিপাড়া মসজিদের সামনে কুদ্দুসের ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। তাদের দায়ের কোপে গুরুতর আহত হন কুদ্দুস। তাকে বাঁচাতে বোন জাবেদা বেগম এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে কুদ্দুসের মৃত্যু হয়। 

নিহতের বোন জাবেদা বেগম বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে আমার ভাইকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ তখন ব্যবস্থা নিলে হত্যাকাণ্ড ঘটতো না। প্রতিহিংসার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।’

পুলিশ জানায়, প্রথম সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শাহিনুর ইসলামের মা শাহানা ইসলাম বাদী হয়ে আবুল কালাম, মিলন মিয়া, জুবায়ের হোসেন, হাকিম আলী, আব্দুল জব্বার, সালাউদ্দিন, রাসেল মিয়া, আবুল হোসেন, আওলাদ হোসেন, মো. হারুন মিয়া, ফিরোজ মিয়া ও আব্দুল আলিমসহ ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। ওই মামলার ১০ নম্বর আসামি হারুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দ্বিতীয়বার হামলার ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

শান্তিপুর তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ‘চেষ্টা করেও দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে পারিনি। তাদের ঠেকাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। অথচ আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। রবিবার দুপুরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি শুনেছি।’ 

সিংগাইর থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং দ্বিতীয় হামলার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। দায়িত্ব পালনে পুলিশের অবহেলা ছিল না। তবু নিহতের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে শান্তিপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আব্দুস সালাম মিয়া ও এএসআই আজিজুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’