আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকায় বিদ্যালয়ের ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ

গাজীপুরের শ্রীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং স্থানীয় নেতাদের নাম থাকায় অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর। রবিবার (১০ মার্চ) বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। পরে সেটি আর হয়নি। 

গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিবার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্যালয়ে এসে রবিবারের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধর করেন। তাদের হুমকিতে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ক্রীড়া অনুষ্ঠানের পুরস্কার কেনার জন্য টঙ্গী গিয়েছিলেন। সেদিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে বিদ্যালয়ে আসেন শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম সরকারসহ কয়েকজন ব্যক্তি। তারা বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছে আমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম না দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় আরিফুল ইসলাম বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে থাকা অন্যরা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে সিঁড়ির নিচে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। অভিযুক্ত আরিফুল বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি।

ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে দেখা যায়, প্রধান অতিথি হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমানের নাম লেখা আছে। বরেণ্য অতিথি হিসেবে আছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান মুকুল ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়ার নাম। বিশেষ অতিথি শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পারুল খানম। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমজাদ হোসেনের নাম লেখা। অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিল না। এমনকি জয় বাংলা স্লোগানও ছিল না। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নামও নেই। স্থানীয় এমপির (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী) ছবি বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে নেই। অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নাম ছিল। কিন্তু এবার তাদের নাম দেওয়া হয়নি। এজন্য আপত্তি জানিয়েছি। এরপর প্রধান শিক্ষক আপাতত অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে ঈদের পর করবেন বলে জানিয়েছেন।’

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত নির্বাচন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে সাবেক সংসদ সদস্যের ছবি দেয়ালে ঝোলানো ছিল। নির্বাচনের পর নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিত্ব পেলেও তার ছবি অফিস কক্ষে টানানো হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্যের অনুসারী হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করেছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।’

শিক্ষককে মারধর করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলিনি কিংবা শিক্ষককে মারধরও করিনি। তাদের কিছু ত্রুটি আছে। ওই ত্রুটি আড়াল করার জন্য তারা এসব বলছে। তবে শিক্ষকের সঙ্গে তর্কতর্কি হয়েছে। বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পাবে। মারধর করা হলে তো বিদ্যালয়ের শিশুরা জানতো এবং দেখতো।’

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কোমলমতি শিশুদের জন্য বছরে একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় কষ্ট পেয়েছে শিশুরা।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, ‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।’