গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দাবি আদায়ে সহযোগিতার কথা জানালে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়ে কারখানার পাশে অবস্থান নেন। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের ১২ দফা দাবি হলো- সরকারি গ্রেড অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করতে হবে, বাৎসরিক এবং সরকারি ছুটি প্রদান করতে হবে, জমাকৃত অর্জিত ছুটির টাকা বছরের প্রথম মাসে পরিশোধ করতে হবে, যথা সময়ে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ দিতে হবে, কাজ করা অবস্থায় কোনও শ্রমিক অসুস্থ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে, চাকরির বয়স ছয় মাস হলে ঈদ বোনাস দিতে হবে, কোনও কারণে চাকরিচ্যুত এবং বহিষ্কার করা হলে তিন মাসের বেতন দিতে হবে, প্রতি ফ্লোরে একজন করে শ্রমিক নেতা দিতে হবে, রাট ৮টার পর কাজ করালে টিফিন বিল দিতে হবে, অন্দোলনরত শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না এবং কারখানার আয়োজনে প্রতি বছর পিকনিকের ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্দোলনরত শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। সারা দেশের সব শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হলেও এখানের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়নি। বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে একাধিকবার শ্রমিকদের বৈঠক হলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। রবিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। এ সময় মহাসড়কে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
কারখানার শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন জানান, তাদের কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। সেখানে সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয় আট হাজার টাকা। এই টাকায় ঘরভাড়া আর খাওয়াদাওয়া করে জীবনযাপন করতে পারেন না তারা। অনেক দিন ধরেই সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানালেও মালিকপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের কথাও শুনতে চায়নি। বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।’