বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন গাজীপুরের টি এন জেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বোর্ড বাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে যানজট লাগে। দুর্ভোগে পড়েন যাতায়াতকারীরা।
শনিবার (০৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ রাত ১০টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরই মধ্যে ওই কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আশপাশের ২১টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। টি এন জেড গ্রুপের ছয়টি কারখানার তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। গত মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিলেও মালিক তাদের বেতন পরিশোধ করেননি। যার কারণে শনিবার সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হন। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ওই মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে চলাচলকারীরা দুর্ভোগে পড়েন। এ সময় অনেকে বিকল্প পথে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
বন্ধ কারখানাগুলো হলো- কোনাবাড়ী-জিরানী এলাকার রেজাউল অ্যাপারেলস লিমিটেড, কেএম নোবলী গার্মেন্টস, বানিকা ফ্যাশন লিমিটেড, ডরিন গার্মেন্টস, ডরিন অ্যাপারেলস, লাইফ টেক্সটাইল, এবিএম ফ্যাশন, পিএন কম্পোজিট নিট লিমিটেড, ভোগড়া বাইপাস এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস, বেসিক ক্লথ লিমিটেড, অ্যাপারেল পালাস ইকো লিমিটেড, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেডসহ ২১টি পোশাক কারখানা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বিভিন্ন যানবাহনে আটকে পড়া যাত্রীদের দুপরের পর থেকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বয়স্ক, শিশু, নারী যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। তাছাড়া যাদের সঙ্গে বড় ব্যাগসহ ছোট শিশু রয়েছে তাদেরকেও বেশ কষ্ট কষ্ট করে গন্তব্য যেতে হচ্ছে।
ময়মনসিংহগামী আলম এশিয়া পরিবহনের চালক সেলিম মিয়া বলেন, সকাল সোয়া ৮টায় মহাখালী থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে আসছি। সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ থাকার কথা থাকলেও ৯টা থেকে বোর্ড বাজার যানজটে বসে আছি।
ওই বাসের যাত্রী রইছ উদ্দিন বলেন, ময়মনসিংহে একটি বেসরাকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ছুটি নিয়ে ঢাকায় বাসায় চলে আসি, শনিবারে দুপুরে কাজে যোগ দেবো বলে। কিন্তু শ্রমিকদের অবরোধের কারণে সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারলাম না।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরে কারখানা খুললেও তিন মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন তারা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, কারখানার মালিক আমাদের দিয়ে কয়েকবার বেতন দেওয়ার সময় দিয়েছেন। কিন্তু মালিক সেই কথা রাখেননি। মালিককে নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে বৈঠক হয়েছে, তারপরও বেতন দিচ্ছেন না। আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেও সারা দিনে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। ওই কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে ২১টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার নাজির আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও তারা সড়ক থেকে সরছে না। মালিকপক্ষ বারবার কথা দিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাই তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা আশ্বাস মানতে রাজি নন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। আমরা অনেক গাড়ি বিকল্প পথে চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানা রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়। এ কারণে শ্রমিকরা সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।