সমন্বয়কদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনাকে ‘ছিনতাই’ বলছে পুলিশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের আট সদস্যের একটি টিম বান্দরবানের উদ্দেশে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ি আটকে ধারালো অস্ত্রের মুখে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। এতে দুজন আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, ‘এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা। এখানে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রাতে এ ঘটনার সময় ওই গাড়িতে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চজ্ঞা, মাহমুদা সুলতানা রিমি, রাকিব মোহাম্মদ, মুঈনুল ইসলাম, ইব্রাহিম নীরব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াসমিন মিতু ও ছাত্রনেতা মিশু আলী। তাদের মধ্যে রাকিব মোহাম্মদ ও মাহমুদা সুলতানা আহত হয়েছেন।

বান্দরবানের লামা উপজেলায় একটি স্মরণসভা ও মতবিনিময়ে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে একটি গাড়িতে করে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল সেখানে যাচ্ছিল। এ সময় এ ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় রবিবার দিবাগত রাত ২টা ৩ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘ঢাকা থেকে বান্দরবানের লামা যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জে হামলার শিকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গাড়িবহর। সেখানে তাদের ব্যাগ এবং মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং অনেকেই হামলায় আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের নিকট ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

হামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার শাখার সংগঠক নীরব রায়হান বলেন, ‘এটা মূলত ছিনতাইকারীরা ঘটিয়েছে। তবে সমন্বয়করা সব সময় স্ট্যাটাস দিয়ে বের হয়। ফলে এটা পূর্বপরিকল্পিত  হতে পারে। গত রাতে মোগরাপাড়ার কাছাকাছি আসার সময় দেশি বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ১০-১২ জনের একদল লোক সড়ক অবরোধ করে। অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও গাড়ির গ্লাস ভেঙে তাদের মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। আর গাড়ির সামনে আরিফ সোহেল বসা ছিল। তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে প্রায় তিন মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ চলে আসে। ততক্ষণে ছিনতাইকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দুজন আহত হয়েছেন। আহত দুজনসহ ৪ জনকে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকিরা বান্দরবানের উদ্দেশে চলে গেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার শাখার নেতৃবৃন্দরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন।’

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহেদ মোর্শেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি ছিনতাইয়ের মনে হয়েছে। ঘটনার সময়ে একটি নোয়া গাড়িতে করে ৮ জন সমন্বয়ক এই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। তবে গত রাতে ঘন কুয়াশার কারণে গাড়ি ধীরগতিতে চলছিল। এ সময় একদল ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্র নিয়ে গাড়ি আটকে ও গাড়ির গ্লাস ভেঙে মোবাইল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এতে কয়েকজন সমন্বয়ক আহত হয়েছেন। তবে সেভাবে গুরুতর আহত নয়।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পুলিশের টহল টিম খুব কাছেই ছিল। তারা ছুটে এসে পায়নি। ততক্ষণে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। তারা ৪ জন ছিল। তাদের হাতে দেশি চাকু ও চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র ছিল। ছিনতাইকারীদের মুখ মাফলারসহ শীতের কাপড়ে ঢাকা ছিল।’

মহাসড়কে প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মোগরাপাড়া ব্রিজের কাছে মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। মেঘনা টোল প্লাজা থেকে শুরু করে এই সড়ক ধরে প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হলে ছিনতাইকারীরা এই সুযোগে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। গত রাতে ঘনকুয়াশা ছিল। যে কারণে মহাসড়কে গাড়ি ধীরগতিতে চলে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা ছিনতাই করে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা হামলা নয়, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত আমরা অনেকটা নিশ্চিত যে এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আমরা সবদিক বিবেচনা করে তদন্ত করছি। এই ঘটনায় কেউ আটক নেই। তবে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’

ছিনতাইকারী চক্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছিনতাইসহ অপরাধ রোধে পুলিশ সড়ক ও মহাসড়কে টহল অব্যাহত রেখেছে। তবে ছিনতাইকারী চক্র সব সময় পুলিশকে তাদের নজরদারিতে রাখে। আমাদের গতিবিধি লক্ষ রেখে সুযোগ বুঝে তারা ছিনতাইয়ের এসব ঘটনা ঘটায়।’

স্থানীয় অন্তত ডজনখানেক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা থেকে মোগরাপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যেখানে গাড়ির টার্নিং পয়েন্ট রয়েছে ও গাড়ি ধীরগতিতে চলে সেসব স্থানে প্রায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এদের কবলে পড়ে অনেকে আহত হচ্ছেন, আবার অনেকে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাদের গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়। ঠিক তার পরদিন ২৮ নভেম্বর হাসনাত আব্দুল্লাহকে আরেকবার গাড়িচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের গাড়িতে হামলা