‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে বটগাছ কর্তন: মালিক বললেন, ‘বিক্রি করে দিয়েছি’

মাদারীপুরে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে বটগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে গাছটির মালিককে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন।

দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গাছের মালিককে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় গাছের মালিক সাত্তার হাওলাদার বলেন, ‌‘যেখানে বটগাছটি রয়েছে সেই জমিতে নতুন করে বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি আমি। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে গাছটি বিক্রি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাটতে অনেক বেশি টাকা খরচ হবে বিধায় কেউ কিনতে চাননি। পরে নামমাত্র মূল্যে শ্রীনদী বাইতুস সুন্নত ক্যাডেট মাদ্রাসার কাছে গাছটি বিক্রি করি। সেটির ডালগুলো কাটা হয়েছে। তবে এখনও গাছ কাটা হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৫ মে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমমীরকান্দি গ্রামের কুমার নদের খেয়াঘাটে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা একটি পুরোনো বটগাছ কেটে ফেলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনা শুরু হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গাছটি কাটা বন্ধ করা হয়। সেইসঙ্গে ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গাছের মালিকও

ইউএনও ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে এবং শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কবির হোসেন ও শিরখাড়া ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাককে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর বটগাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে আইনি কোনও পদক্ষেপ প্রয়োজন হলে, সেটি আমরা দেখবো।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, বটগাছটির বয়স শতবর্ষ হবে না। ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হবে। এটির পুরো অংশ মাটি থেকে কেটে ফেলা হয়নি এখনও। তবে কারও ব্যক্তিগত জমিতে থাকা কোনও বৃক্ষ জমির মালিক বিক্রি বা কর্তন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এখানে আইনগত তেমন কোনও বাধা নেই।’

শ্রীনদী বাইতুস সুন্নত ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মাতুব্বর বলেন, ‘আমরা সাত্তার হাওলাদারের কাছ থেকে বটগাছটি মাদ্রাসায় ব্যবহারের জন্য ক্রয় করি। খরচ কমানোর জন্য নিজেদের লোকজন নিয়ে কর্তন করেছি। তার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় এখন এটি আলোচনায় এসেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন প্রমুখ।