সুন্দরবন এলাকায় বাড়ছে বনদস্যু ও বাহিনীর সংখ্যা। রবিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক ৫ দস্যুর মধ্যে ৪ জনই নতুন মুখ। এরা দস্যু প্রধান সামছু ওরফে কোপা সামছু বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। সোমবার র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার লে. এ এম জাহিদুল কবীর র্যাব-৬ এর লবণচরাস্থ সদর দফতরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরেছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী ফেরি ঘাটের পূর্ব দিকে নদীর পার এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-৬ এর সদস্যরা। এ সময় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সামছু বাহিনীর ৫ সদস্যকে আটক করা হয়।
তারা হলো- মো. মোতাহার হোসেন (মোতা), মো. রায়ফুল ইসলাম (রাজু), মো. এনায়েত হোসেন (এনায়েত), মো. মিজানুর রহমান (মিজান) ও মো. আনোয়ার শেখ (৬০)।
আটককৃত মোতাহার হোসেন মোতার নামে বাগেরহাটের রামপাল থানায় একটি মামলা রয়েছে। অন্য ৪ জন সামছু বাহিনীতে নতুন যোগদান করেছে। র্যাবের অভিযানের সময় আরও ৫/৬ জন বনদস্যু পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় তৈরি ৩টি একনলা বন্দুক, ১টি দেশীয় তৈরী পাইপগান, একটি দেশীয় গাদা বন্দুক এবং ২৯ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৬ এর প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ খ্যাত সুন্দরবন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করে জেলে, মাওয়ালী থেকে শুরু করে নানা পেশাজীবীর মানুষ বসবাস এবং জীবিকা নির্বাহ করে। সুন্দরবন এলাকায় দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা, ডাকাতি ও দস্যুতা দমনের জন্য সরকার কর্তৃক একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের আওতায় র্যাব-৬ খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু ও বনদস্যুদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এসব এলাকায় দুর্ধর্ষ বাহিনীগুলো দীর্ঘদিন ধরে দস্যুতা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন বাহিনীর বিরুদ্ধে র্যাব-৬ এর অভিযান অব্যহত রয়েছে।
র্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার লে. এ এম জাহিদুল কবীর বলেন, ‘সুন্দরবনে নিত্য নতুন দস্যু বাহিনীর আবির্ভাব ঘটছে। এ কারণে সুন্দরবনের দস্যু বাহিনীর সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন। তবে সামছু, মিন্টু, নান্নু, আলিম, আফজালসহ বিভিন্ন নামের বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। সামছু বাহিনী সুন্দরবনের আন্দারমানিক, আড়ুয়া খাল, দাকোপ ও মংলা এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই বাহিনীতে ১০-১২ জন্য সদস্য রয়েছে, যার অধিকাংশই নতুন মুখ।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ভালো পথে আসার জন্য দস্যুদের আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দেওয়া হলেও এরা সে সুযোগ নিচ্ছে না। কারণ সুন্দরবন এলাকায় দস্যু বাহিনীর অর্থ পাওয়ার অনেক অবৈধ উৎস রয়েছে, যা দস্যুদের আকৃষ্ট করছে। এ কারণেই নতুন মুখের দস্যুও আবির্ভাব ঘটছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ মে থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৮টি বাহিনীর ৭২ জন দস্যু আতসমর্পণ করেছে। এরা বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়েছে। আতসমর্পণকৃতদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তবে, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তাদেরকে পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ৭ জানুয়ারি ৬০ দস্যু পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও একটি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়েছে।
/এআর/