পাওনা টাকা চাওয়াই কাল হলো মুক্তিযোদ্ধা আজাদের!


মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদসাতক্ষীরার ঘোনা বাজারে এসএ ট্রেডার্স নামে রড সিমেন্টের দোকান ছিল মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদের। সেই দোকান থেকে পাঁচ হাজার টাকার সিমেন্ট বাকি নেন ইকরামুল নামে এক ব্যক্তি। টাকা পরিশোধে নানা টালবাহানা করছিলেন ইকরামুল। কিছুদিন অপেক্ষার পর পাওনা টাকা চাইতে গেলে ইকরামুল ও তার সহযোগীরা বাঁশ ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে আজাদকে। এমনটাই দাবি করেছেন নিহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদের পরিবার। তারা অভিযোগ করেছেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবেই আবুল কালাম আজাদকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যা নয় বরং মারধরের পরিকল্পনা ছিল।

নিহত আবুল কালাম আজাদ ঘোনা গ্রামের  বাসিন্দা। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারধরে আহত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে আক্তারুল ইসলাম শিমুল সাতজনকে আসামি করে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- একই গ্রামের মোমিনুল ইসলাম (৪২), আব্দুল ওয়াদুদ (৫৪), মুন্না হোসেন (১৫) ও মো. রনি (১৪)।

নিহত মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে আক্তারুল ইসলাম শিমুল জানান, ‘ঘোনা বাজারে এসএ ট্রেডার্স নামে আমাদের রড সিমেন্টের একটি দোকান রয়েছে। ইকরামুল আমাদের দোকান থেকে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার সিমেন্ট বাকিতে নেয়। পরে টাকা পরিশোধে টালবাহানা করতে থাকে। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে ঘোনা বাজারে আমার বাবা ইকরামুলের কাছে পাওনা টাকা চায়। এতে আইফুর ও একরামুলসহ ৭/৮ জন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও বাবাকে বাঁশ  ও লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকে। এতে নেতৃত্ব দেন ঘোনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাইদ মনোয়ার। এরপর আব্দুল ওয়াদুদ আমার বাবাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা বাবাকে  উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে ভোররাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামি আইফুর, ইকরামুল, আলিমুল ও আব্দুল ওয়াদুদ সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সবাই ঘোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মোশার লোক। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। কিছু বলা হলে তাদেরকে মারধর করা হয় এবং চেয়ারম্যান মোশার জোরে তারা এলাকার বিভিন্ন মানুষের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করে।’ 

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই কামাল হোসেন খাঁন বলেন, ‘ব্যবসায়িক লেনদেনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা আজাদ ও তার ছেলেকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে অসুস্থ হয়ে আজাদ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে হত্যা করার পূর্বপরিকল্পনা ছিল না অভিযুক্তদের। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মারধর করার। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাতজনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাসানুল ইসলাম বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ আমার সঙ্গে আট নম্বর সেক্টরের অধীনে ভোমরা বন্দরে, কাকডাঙ্গা, হাকিমপুরের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিল। সেই মুক্তিযোদ্ধাকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির দাবি করছি। আমাদের সহযোদ্ধার নিহতের ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে।’

এদিকে আটক হওয়া চার পরিবারে দাবি, ঘটনার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। মামলার এক নম্বর আসামি আইফুরের স্ত্রী সাবিনা এবং আইফুরের ভাই ও দুই নম্বর আসামি ইকরামুলের স্ত্রী রাফিয়া খাতুন বলেন, ‘তিনি আমাদের মামা শ্বশুর হন। এর আগে তিনি দুইবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া হওয়ার  একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দাবি এটি হত্যা না দুর্ঘটনা।’  

এ বিষয়ে ঘোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মোশা বলেন, ‘যিনি মারা গেছেন তিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন। যারা অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হয়েছে তারা আমাকে ভোট দিয়েছে ও আমার সমর্থক। তবে নিহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ছেলে হত্যাকারীরা আমার লোক বলে যে কথা বলেছে তা ঠিক না। বাবা হারানোর শোকে তার মাথা ঠিক নাই। আমিও হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

/এআর/এফএস/

আরও পড়ুন- 


ধর্মঘটে সহিংসতার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেন নৌমন্ত্রী