ট্রলার ডুবি: লাশের অপেক্ষায় পানগুছির তীরে স্বজনরা

 

স্বজনদের ভিড় নদীর তীরেবাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের পানগুছি নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির পর দুদিনে  ৫ টি লাশ উদ্ধার করা  হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন এখনও অন্তত ১৭ জন। লাশের অপেক্ষায় পানগুছি  নদীর তীরে দাঁড়িয়ে প্রহর গুনছেন স্বজনরা। দুই দিন পেরিয়ে যাওয়াতে নিখোঁজদের জীবিত পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে এখন লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা।

নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের ভাসান্দল গ্রামের নিখোঁজ গৃহবধূ সালমা বেগম ও তার দুই বছরের সন্তান সাজ্জাদ হোসেনের খোঁজে অপেক্ষা করছেন শ্বশুড় আ. মজিদ হাওলাদার। তিনি জানালেন, জমি বিক্রি করার জন্য তারা ৫ জন ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছিলেন। এর মধ্যে ৩ জন জীবিত উদ্ধার করা হলেও সালমা বেগম ও তার দুই বছরের সন্তান উঠতে পারেননি। অনেক খুঁজেও তাদের দুজনের লাশও পাওয়া যায়নি।

ট্রলারে থাকা চিংড়াখালী ইউনিয়নের কাসেম শেখের ছেলে আব্দুল মজিদ শেখের (৬৫) খোঁজে এসেছেন তার ভাই রফেজ উদ্দিন সেখ। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘অন্তত লাশটা তো আমরা পেতে পারি।’

স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত কালিকাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলামের (৩০) খোঁজে এসেছেন তার চাচা মজিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘রফিকুল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে নিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন। ট্রলার ডুবির পর ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হলেও রফিকুল ইসলাম নিখোঁজ।’

এভাবে আরও অনেক নিখোঁজের স্বজনরা পানগুছি নদীর পাড়ে বসে রয়েছেন। কোন লাশ পাওয়ার খবর পেলেই তারা ছুটে আসছেন।

এদিকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নদীর পাড়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্ধার কাজে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতারা সহায়তা করছেন।

ঘটনাস্থলে থাকা বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মাসুদ সরদার জানান, ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে। আজ ( বুধবার) আশা ছিল কিছু লাশ পাওয়া যাবে। কিন্তু মাত্র একটি লাশ পাওয়া গেছে। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে লাশগুলো দূরে চলে যেতে পারে বলে তিনি জানান।

অপরদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোমিনুর রশিদ বুধবার রাত ৯টায় জানান, তদন্ত কমিটি যথা সময়ে কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টায় মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা নদী থেকে অন্তত ত্রিশ জনকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন। ঘটনার পরপরই দমকল বিভাগ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে নদী থেকে ৪ নারীর লাশ উদ্ধার করে। পর দিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে পানগুছি নদীর শ্রেণীখালী এলাকার চর থেকে রিমা বেগম (২১) নামের আরও এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত দুদিনে ট্রলারডুবির ঘটনায় ৫ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

/এএ/