বনকর্মীদের নেই কোনও ঝুঁকি ভাতা, রেশন

01

সুন্দরবনের ভেতরে বিপদজনক পরিবেশে কাজের সময় কোনও ঝুঁকি ভাতা, রেশন, এমনকি দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থাও নেই বনকর্মীদের। বেতনও খুব কম বলে অভিযোগ তাদের। ফলে অনেকেই একটু ভালোভাবে চলার আসায় পাচারকারীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বনকর্মী। বৈধ পাশ-পারমিটের বাইরে জেলে ও বাওয়ালিদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বাড়তি জ্বালানিকাঠ সংগ্রহ, চিংড়ির রেনুপোনা আহরণ, মাছ ও কাকড়া ধরার সুযোগ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের বনকর্মীরা।  

বনকর্মীরা জানান, দশ বছর আগে তাদের ঝুঁকি ভাতা ও রেশন চালুসহ কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়। যা আজও আলোর মুখ দেখেনি।

এ প্রসঙ্গে সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'বনকর্মীদের ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর কাজের ধরণ প্রায় একই। তবে বনকর্মীদের ঝুঁকিটা অনেক বেশি থাকে। কারণ তারা বনের মধ্যে গিয়ে পাহারা ও টহল দেয়। কাজেই বনকর্মীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকাটা জরুরি।'

03

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে কর্মকর্তা, বনপ্রহরী ও বোটম্যান মিলে পদ আছে এক হাজার ৬৫টি। কিন্তু বর্তমানে ৯০০ জন কর্মরত আছেন। বাকি ১৬৫টি পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য। এই জনবলের অধিকাংশই পরিবার পরিজন ছেড়ে দুর্গম সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থান করে পাহারা দিচ্ছেন। তাদের ছুটিও তুলনামূলক কম। যাতায়াতও কঠিন হওয়ায় বনকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ কম পান। সুন্দরবনে বেড়ে পোকা নামে এক ধরণের ছোট ছোট পোকার আক্রমণ অসহনীয়। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বনকর্মীদের হাতে কোনও ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো সরঞ্জাম বা ওষুধও নেই। বর্ষা মৌসুমের জন্য নেই কোনও রেইনকোট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবনের একাধিক বনপ্রহরী ও বোটম্যান বলেন,  ‘অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে বনপ্রহরীদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবধানটা অনেক বেশি। একজন বনপ্রহরী বা বোটম্যান ৩০ বছর চাকরি করার পর সর্বসাকুল্যে বেতন পান ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই টাকায় কি সংসার চলে? বাধ্য হয়ে অনেকেই অবৈধ অর্থের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন।’

বনকর্মী মিজানুর আক্ষেপ করে বলেন, ‘বনকর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রতিটি স্টেশন ও ক্যাম্পে ‘ইমার্জেন্সি ফাস্ট এইড বক্স’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে এখন আর কোনও অসুধ নেই। খালি পড়ে আছে। একজন অসুস্থ হলে তাকে প্রাথমিক ও দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।

খুলনা সার্কেলের সহকারী বন সংরক্ষক চৌধুরী আমির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবন সুরক্ষা’র জন্য প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা গত বছরের জুলাই মাসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে আছে। এই প্রকল্পের মধ্যে সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় অবকাঠমো নির্মাণ, আধুনিক জলযান কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ, বনকর্মীদের বিশেষ করে বনপ্রহরী ও বোটম্যানদের পেশার মান উন্নয়ন, রেশন, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসা ও পোশাক খাতসহ ১৪০ খাতে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা আছে। এটি অনুমোদন হলে সুন্দরবন সুরক্ষার কাজ আরও গঠনমূলকভাবে করা যাবে।

/জেবি/   

 আরও পড়তে পারেন: সেলিমের বাড়ির পেছন থেকে ৫টি বোমা উদ্ধার