গরমে খুলনায় ডায়রিয়া রোগীর ৪৫ ভাগই শিশু। বর্তমানে পানির চাহিদা বেশি। কিন্তু বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র। এ কারণে জীবাণুযুক্ত ও দূষিত পানি পানে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে দিনে গড়ে ২১ জন এবং শিশু হাসপাতালে গড়ে ১৯ জন ডায়রিয়া রোগী সেবা নিচ্ছে। খুলনার বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। সব মিলিয়ে দিনে গড়ে ৬০ জন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আইডি হাসপাতালে ডায়রিয়ার স্যালাইন ও ওষুধ সংকট রয়েছে। বেড স্বল্পতার কারণে সরকারি হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ডায়রিয়ার স্যালাইন সংকট থাকার কথা নয়। আইডি হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে।
তবে আইডি হাসপাতালের স্টোর কিপার অরন্দিম মণ্ডল বলেন, এ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বেশি থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর জন্য স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ থাকে না। তাই স্যালাইন সংকট রয়েছে।
আইডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বাদল বৈরাগীর অভিভাবক পলাশ বৈরাগী জানান, রাতে মিষ্টি খাওয়ার পর তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পাশাপাশি বমিও হয়। হাসপাতালে আনার পর বাইরে থেকে স্যালাইন ও ওষুধ কিনতে হয়।
মানিকতলার বাসিন্দা বৃদ্ধা রওশন আরা বলেন, মুড়ি ও রুটি খাওয়ার পর বমিসহ ডায়রিয়া শুরু হয়। হাসপাতালে স্যালাইন ও ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি মনির শেখ জানান, তিনদিন ধরে তিনি জ্বরসহ মাথায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছেন। গরমে পিঠে লাল দাগ হয়েছে।
আইডি হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স কনিকা রানী দাস বলেন, এ হাসপাতালে গত ২২ দিনে সাড়ে ৩শ’ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এপ্রিল মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সেবা নিয়েছে ৩৯৮ জন।
খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান জানান,গরমের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে। খুলনা শিশু হাসপাতালে গত ২২ দিনে ৪২৯ শিশু ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছে। এপ্রিল মাসে এ সংখ্যা ছিল ৫৬৭ শিশু।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, ৩১ বেডের এ হাসপাতালে দৈনিক ৪০ জনের ওপর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ জন চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মেহেদি বলেন, ডায়রিয়া রোগী এখন বেশি আসছে। ৫০ বেডের এ হাসপাতালে রোগীর সঙ্কুলান হচ্ছে না। ফলে মেঝেতে রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. আ. মজিদ জানান, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে ৫০ জনের ওপরে রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, আজ (২৩ মে) খুলনার তাপমাত্রা ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২২ মে ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ মে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০ মে ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এ অবস্থা আরও দুই/তিন দিন থাকতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে শেখপাড়ার শামসুল আলম জানান, লোডশেডিং গরমকে আরও অসহনীয় করে তুলছে। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ জানান, আসন্ন রমজানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ওভারহোলিং গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কারণে কয়েকটি বিদ্যুৎ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কমও হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঝড়ে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।
/বিএল/