সরবরাহ পর্যাপ্ত তবুও মাগুরায় চালের মূল্য চড়া

jessore rice pic 2মাত্র কয়েকদিন আগেই শেষ হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের সরবরাহ রয়েছে। এই মুহূর্তে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকার কথা থাকলেও মাগুরায় বিভিন্ন বাজারে চালের দাম চড়া। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।


আজ মঙ্গলবার মাগুরা শহরের পুরাতন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা প্রতি কেজি। মাঝারি মানের চাল বিআর ২৮ টাকা, লতা, স্বর্ণা ও পারিজা বিক্রি হতে দেখা গেছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকলেও সরকারিভাবে চলছে না ওএমএস কর্মসূচি। এই পরিস্থিতিকে অনেকেই মিল মালিকদের কারসাজি বলে মনে করছেন।
শহরের রিকশাচালক আজমত বলেন, কদিন আগেও যে চাল ৩৫ টাকা কেজি ছিল এখন তা ৪৪ টাকা। সরকার নাকি ১০ টাকায় চাল বিক্রি করে, আমরা তো পাই না।
শহরের কলেজ পাড়ার বাসিন্দা রুবায়েত ফিরোজ জানান, বাজারে চালের সরবরাহের কোনও কমতি নেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্বেও চালের চড়া মূল্য মিল মালিকদের কারসাজি ছাড়া কিছুই না। এই মুহূর্তে সরকারিভাবে খোলাবাজারে চাল বিক্রি করা হলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকতো।
মাগুরা পুরাতন বাজারের খুচড়া ব্যবসায়ী কৃষ্ণপদ বলেন, সরকারি চালের মজুদ তলানিতে থাকায় সরকার খোলাবাজারে চাল বিক্রি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে মিল মালিকেরা।
মাগুরা নান্দুয়ালী এলাকার মিল মালিক সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বর্তমানে প্রতি মণ ধান কিনছি ১ হাজার টাকা দরে যা গত বছর ছিল সাড়ে ৭০০ টাকা। ১ হাজার টাকা দরে প্রতি মণ ধান কিনে মিলে চাল তৈরির প্রক্রিয়ার খরচসহ গড়ে প্রতি কেজি চালের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজিতে সর্বনিম্ন ২ টাকা লাভ করে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি ৪২ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা আবার ২ টাকা লাভে প্রতি কেজি বিক্রি করছে ৪৪ টাকা দরে। সুতরাং মিল মালিকদের অভিযুক্ত করার কোনও সুযোগ নেই। ধানের উৎপাদন মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম চড়া।’
মাগুরা নালিরডাঙ্গি এলাকার কৃষক ওলিয়ার রহমান বলেন, আমরা ধান বিক্রি করেছি একমাস আগে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের কাছে এখন শুধু পরিবারের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই মজুদ রয়েছে। ধানের সিংহভাগ এখন ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের দখলে। তারা খেয়ালখুশি মতো দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে।
মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছি। এ অভিযানে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় ১৭৮ জন মিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বোরো ধান সংগ্রহের পাশাপাশি সরকার বাইরে থেকে চাল আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সুতরাং সরকারিভাবে চালের মজুদ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তখন খোলাবাজারে চাল বিক্রি করা হলে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আজমুল হক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মিল মালিকদের প্রতি কড়া নজরদাড়ির নির্দেশ দিয়েছি।১৯৫৬ সালের খাদ্য মজুদ আইন অনুযায়ী একজন বড় মিলার সর্বোচ্চ ৩০০ মেট্রিক টন আর ক্ষুদ্র মিলার ১৫ মেট্রিক টন ধান বা চাল একমাস মজুদ রাখতে পারবে। আমরা যদি কোনও মিলারের ক্ষেত্রে এই আইনের লঙ্ঘণ দেখি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
/এআর/