যশোর মেডিক্যাল কলেজে (যমেক) আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগকৃত কর্মীদের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কর্মচারীদের দাবি, জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঊষা এসসি লিমিটেডকে সরকার সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৫ শতাংশ টাকা দিলেও নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীদের কাছ থেকে জোর করেই টাকা আদায় করছে তারা। প্রতিবাদ করলেই ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হয়, ফলে ক্ষোভ থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না কর্মচারীরা।
জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে গালফ নামে একটি প্রতিষ্ঠান জনবল সরবরাহের কাজ পায়। ওই সময় ৪৫ জন কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের প্রত্যেকে রাজস্ব খাত থেকে বেতন পেতেন। পরে আরও দু’দফায় ২০জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের বেতন দেওয়া হয় উন্নয়ন খাত থেকে। গালফ কাজ করে দু’বছর। পরে ঊষা এসসি লিমিটেড টেন্ডার বিট করে জনবল সরবরাহের কাজ পায়। এখন তারাই কাজ করছে।
কর্মচারীরা জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (এমএলএসএস, আয়া, পিওন, কুক, মশালচি, ক্লাম্বার, গার্ড, টেবিল বয় ইত্যাদি পদে) ৬৫ জন কর্মচারী দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চাকরি করলেও স্থায়িত্ব নেই। আর চাকরি যাতে বহাল থাকে, সেকারণে প্রতি মাসে তাদের বাধ্যতামূলক গুণতে হয় নগদ ৫ হাজার টাকা।
অফিস সহায়ক শান্তা জানান, ‘১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন হলেও মাস শেষে আমাদের থাকে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা। টাকা না দিলে পরের বছর চাকরি নবায়ন করা হবে না বলে হুমকি দেন সুপারভাইজার। সে কারণে বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হচ্ছে।’
আসাদুজ্জামান সুইট নামে অপর কর্মচারী জানান, ‘৬৫ জনের মধ্যে ৫-৬ জন মাসশেষে টাকা দেন না। অন্যদের কাছ থেকে জোর করেই টাকা নেওয়া হয়। সম্প্রতি ৮ মাসের ৪০ হাজার টাকা কিস্তি করে তিন দফায় চেকের মাধ্যমে তারা পরিশোধ করেছেন। প্রথম দফায় ১৪ হাজার এবং পরবর্তী দু’দফা ১৩ হাজার।’
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. খায়রুল হাসান বলেন, ‘ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান ঊষা এসসি লিমিটেড কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৫ শতাংশ হারে সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কর্মীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণ অন্যায়।’
যশোর মেডিক্যাল কলেজের অ্যাকাউনটেন্ট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিল করেন, মাসিক বেতনের চেক নিয়ে যান। আমরা কর্মচারীদের চেকের ফটোকপি গ্রহণ করি। দু’মাস বা তিনমাস বেতন ডিউ আছে, এমন ঘটনা এখানে ঘটেনি।’
ঊষার নিয়োগকৃত সুপারভাইজার কোরবান আলী বলেন, ‘প্রথম দফায় যে ৪৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়, আমিও তাদের একজন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩ বছর পর আমাকে কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। সে অনুযায়ী আমি কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে জনপ্রতি ৫ হাজার করে টাকা তুলে প্রতিষ্ঠানকে দিতাম। সম্প্রতি আমার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ফয়সাল ইসলাম নামে আরেকজন।’
বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘পারলে কেউ প্রমাণ করুক, আমি কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আউটসোর্সিংয়ের এই কাজে কোনও কর্মচারী যদি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চাকরি গ্রহণ করে থাকে, সেটা তাদের ব্যাপার। কর্মচারীরা প্রথম থেকেই কোম্পানিকে ২০-৩০ হাজার করে টাকা দিয়ে চাকরি করে আসছে।’
ঊষা এসসি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফিরোজের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। শেষে তাকে এসএমএস করা হয়, কিন্তু তিনি সেটারও কোনও জবাব দেনিন।
জানতে চাইলে যশোর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. এএইচএম মাহবুব উল মওলা চৌধুরী বলেন, ‘টেন্ডারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জনবল সরবরাহ করে থাকেন। এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেয়। তাদের বেতন অ্যাকাউন্ট পে-চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। কর্মচারীদের বেতন মূলত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপার। এখানে বেতন বিষয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। তারপরও যদি এ বিষয়ে তারা লিখিত কোনও অভিযোগ দেন, তাহলে ঠিকাদারের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে।’
/এমও/এএ/