চুয়াডাঙ্গায় টানা বর্ষণে বন্ধ চাতাল, দেড় কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

গত ১০ দিনের টানা বর্ষণে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় দেড় শতাধিক চাতাল বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এসব চাতালে কয়েক হাজার টন ধান সিদ্ধ অবস্থায় পচে নষ্ট হচ্ছে। চাতালগুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকায় ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ এ চুক্তিতে কর্মরত প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার একটি চালাতে কাজ করছেন শ্রমিকরাউপজেলা চালকল মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, টানা বর্ষণে চাতাল মালিকদের এখন পর্যন্ত অন্তত দেড় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এরকম বিরূপ আবহাওয়া আরও কিছুদিন চলতে থাকলে বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাবে এবং চালের দাম বৃদ্ধির আশংকাও করছেন সংশ্লিষ্টরা। লক্ষ্মীপুর, পেয়ারাতলা, উথলী, আন্দুলবাড়ীয়া ও হাসাদহ চালের মোকামগুলোতে গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

জীবননগর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত চালকল ও চাতালের সংখ্যা ৬৫টি। নিবন্ধনের বাইরেও রয়েছে দ্বিগুণ সংখ্যক চাতাল। এসব চাতালে ৮ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করে থাকেন। বেশিরভাগ চাতালেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন। মালিকদের পাশাপাশি তাই এসব শ্রমিকরাও বিপাকে পড়েছেন।

চাতাল ও চালকল মালিকরা জানান, প্রতিটি চাতালেই বিপুল পরিমাণ ধান ভেজা ও সিদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বৃষ্টির কারণে সিদ্ধ ধানগুলো শুকানো যাচ্ছে না। সিদ্ধ ধানগুলো স্তুপ করে পলিথিন ও বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। হাউজে ভেজা ও চাতালে ঢাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ইতিমধ্যে ধানের ভেতরের চালের দানা পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। বৃষ্টি থামার পর এসব ধান শুকানো হলেও চালের রঙ ও গন্ধের কারণে তা মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী হবে এবং পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে হবে।

ব্যবসায়ী সমিতির মতে, এই বর্ষায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ চাতাল, চালকল ও চাল ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের চাতাল মালিক মো. আতিয়ার রহমান জানান, তার চাতালে ৩৫০ মণ ধান সিদ্ধের পর শুকানোর অপেক্ষায় পড়ে আছে। ভেজানো আছে প্রায় সমপরিমাণ ধান। এই বর্ষায় তাকে অন্তত ২ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে।

এছাড়া, উপজেলার দেড় শতাধিক চাতালে কর্মরত এক হাজারের অধিক শ্রমিকের নির্ধারিত কোনও মজুরি নেই। তাদের মজুরি নির্ধারিত হয় ধানের মাঠ হিসেবে। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় একটি মাঠ উঠতে সময় লাগে ২-৩ দিন। মাঠ উঠলেই কেবল একজন শ্রমিক ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা মজুরি এবং দৈনিক খোরাকি বাবদ ৩ কেজি ভাঙা চাল পান। চাতাল বন্ধ থাকলে বা চাতালে কাজ না থাকলে তারা কোনও মজুরি পান না। গত ১০ দিনের টানা বর্ষণের কারণে চাতালে ধান শুকানোসহ কোনও কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় তারা কোনও মজুরি পাচ্ছেন না।

চাতাল শ্রমিক এমদাদ হোসেন (৪০) জানান, তিনি নিজে এবং স্ত্রী আমেনা খাতুন (৩২) দু’জনই চাতাল শ্রমিক। তারা চুক্তিতে ধান সিদ্ধ, শুকানো ও চাল বানানোর কাজ করেন। চাল বানানো হলে তারা টাকা পান। টানা বর্ষণের কারণে গত ১০ দিন থেকে তারা বেকার। ফলে প্রতিদিনই চাতাল মালিকের কাছে আগাম ঋণ নিয়ে একবেলা-আধবেলা খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। অন্যান্য চাতাল শ্রমিকদেরও একই অবস্থা।

জীবননগর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, জীবননগর উপজেলায় সবমিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক চাতাল রয়েছে। এসব চাতালে এখন পুরোদমে ধান সিদ্ধ, শুকানো ও চাল তৈরির কথা। কিন্তু গত ১০ দিন থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে চাতাল ও চালকল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা মহাবিপাকে পড়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে এই খাতের সাথে জড়িতরা বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।

/এমও/