সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা জানাচ্ছেন, বন্যার অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এদিকে আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশে পণ্যটির চাহিদা ব্যাপক। তাই ভারত থেকে বেশি দামেই আমদানি করতে হচ্ছে পেঁয়াজ। সেই প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ‘ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সম্প্রতি বন্যা হয়েছে। এ কারণে সেখানেও পেঁয়াজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সরবরাহ কম। এ কারণেই মূলত কয়েকদিনের ব্যবধানে আমাদের দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।’
এদিকে ভারতে বন্যা পরিস্থিতিকে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে দাঁড় করানোকে মানছেন না সাধারণ ভোক্তারা। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে জানিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, এজন্য সিন্ডিকেট দায়ী। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সাতক্ষীরা ভোমরা কাস্টমস সহকারী কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কলকাতা থেকে দূরত্ব কম হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েই পেঁয়াজ আমদানি হয় বেশি। গত জুলাইয়ে এখান দিয়ে ভারত থেকে ৩৬ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ এসেছে। এখন প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে ৬৫ থেকে ৭০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আশিক এন্টারপ্রাইজ ও ভোমরা বন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আল ফেরদাউস আলফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় তলিয়ে গেছে ভারতের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা নাসিক। কিন্তু আসন্ন কোরবানির ঈদের কারণে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে বেশি দামে।’
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দেলওয়ার রাজু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পচনশীল পণ্য হওয়ায় পেঁয়াজ দ্রুত পরিবহন করতে হয়। ভোমরা বন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় এখান দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে বেশি।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির তথ্য সঠিক নয় বলে মনে করেন কাজী নওশাদ দেলওয়ার রাজু। তার ভাষ্য, ‘আমাদের দেশে এ পরিমাণ উৎপাদন হলে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা না। কারণ ভোমরা বন্দর দিয়ে সারাবছরই পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।’
স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মেসার্স এমএম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী। তিনিও বললেন, ‘সরকার যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়। আমাদের দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে মাত্র দুই মাস চলবে।’
তবে ঈদকে সামনে রেখে অসাধু অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে বলে স্বীকার করেন ভোমরা স্থলবন্দরের এই ব্যবসায়ী।
/জেএইচ/