সুন্দরবনে হাতের নাগালেই মাছ শিকারের বিষ

poison-1সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে প্রতিনিয়ত রাতের আঁধারে বিষ প্রয়োগ করে চলছে মাছ শিকার। এই ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে কার্যকরী উদ্যোগ নেই বললেই চলে। একশ্রেণীর অসাধু জেলে এই বিষ দিয়ে সুন্দরবনের খালগুলোতে মাছ শিকার করছে। এ কারণে হুমকির মুখে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।

মাছ শিকারের জন্য হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে বিষ বা কীটনাশক। কোনও নিয়মের বালাই যেন নেই। যে কোনও কীটনাশক দোকানে গেলেই পাওয়া যায় মাছ শিকারের এই ওষুধ। তবে দোকানিদের ভাষ্য, কীটনাশক শুধু যে মাছ শিকারের জন্য ব্যবহার হয় তা নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের ৩১ দশমিক এক ৫ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। এখানকার অসংখ্য খালে আছে প্রায় তিন শতাধিক প্রজাতির মাছ। বনবিভাগ থেকে অবশ্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কিছু খাল।

বনবিভাগের পশ্চিম রেঞ্জের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ১৮টি খালে সব ধরনের মাছ ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রাদান করা হয়। কারণ এই ১৮টি খালে মা মাছ অবস্থান নেয়। মাছের প্রজননের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ তা শিকার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। গত পাঁচ বছরে এই অপরাধে ৩৭টি মামলা দিয়ে আসামিদের জেলে পাঠানো হয় বলে তথ্য দেন এই বনকর্মকর্তা।poison-2

গত জুনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময় চার জেলেকে আটক করে কোস্টগার্ড। পরে তাদের খুলনার কয়রা থানায় সোপর্দ করা হয়। এমন তথ্য দিয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিমজোনের (মংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার ফরিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে ধরায় শুধু অন্য প্রজাতির মাছই ধ্বংস হচ্ছে না, এর সঙ্গে বন ও পরিবেশের মারাতœক ক্ষতি হচ্ছে।

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে কঠোর অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে কোস্টগার্ড। একই সঙ্গে জেলেদের যেসব মহাজনরা বিষ দিয়ে বনের খালে পাঠাচ্ছে তাদেরকেও চিহ্নিত করে ধরা হবে বলে জানান কোস্টগার্ড পশ্চিমজোনের (মংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা।

poison-3তবুও সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ধ্বংসজ্ঞ থেমে নেই। একশ্রেণীর অসাধু জেলেচক্র এই অভয়ারন্যে প্রতিনিয়ত বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে চলছে। সুন্দরবন উপক‚লীয় এলাকার জয়মনি গ্রামের প্রদীপ মন্ডল, আলমগীর ও নজরুলসহ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বেশি মুনাফার আশায় সুন্দরবনের বিভিন্ন নিষিদ্ধ খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করেন বলে স্বীকার করেছেন তারা। জেলেদের দাবি, এই বিষ বাজারের যে কোনও কীটনাশক দোকান থেকে সংগ্রহ করা যায়।

এ নিয়ে কথা হয় জনতা এন্টারপ্রাইজ নামে মংলা বাজারের সার ও কীটনাশক দোকানের মালিক সেলিমের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান— ডায়মগ্রো, ফাইটার, রিপকর্ড এবং পেসিকল নামের কীটনাশক কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য চাষীরা কিনে থাকেন। এগুলো দিয়ে সুন্দরবনের খালে মাছ মারা হয় কিনা তা তার জানা নেই বলে দাবি এই দোকানির। কৃষি বিভাগ অনুমোদন দেওয়ার পরই এই কীটনাশক বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে মংলা উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এই কীটনাশকের অপব্যবহার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। পাশাপাশি সজাগ থাকতে বলেছেন বনবিভাগকেও।

জানা যায়— সুন্দরবনের ঢাংমারী, মরাপশুর, জোংড়া এবং ঝাপসি এলাকায় স্থানীয় কিছু লোকজন প্রতিনিয়ত বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। এই বিষাক্ত পানি সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল থেকে ভাটার সময় নদীতে নেমে আসে। এ কারণে মরে যাওয়ায় এখন নদীতে আর ছোট-বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

চিকিৎসকরা জানান, এই বিষাক্ত পানির মাছ মানবদেহের জন্য মারাক্ষতক ক্ষতিকর। মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিষাক্ত পানির মাছ খেলে মানুষের কিডনি ও লিভারে জটিলতা দেখা দেয়। তাই বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

/জেএইচ/