র্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় র্যাবের সঙ্গে বনদস্যু রাজুর গুলি বিনিময়ের পর রাজু পালিয়ে ভারতে চলে যায়। এরপর জুলফিকার, গামা, শহীদুল, মুর্তজাসহ অন্তত ১০টি বাহিনীর প্রধানরা সুন্দরবনে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হবার পর বনদস্যুরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চালাতে থাকে জেলে-বাওয়ালী-মৌয়ালদের উপর অমানবিক নির্যাতন।
২০১৬ সালের ৩১ মে র্যাব-৮ এর কাছে সুন্দরবনের বনদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’র প্রধান ও তার নয় সহযোগীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ১৩ জুলাই বনদস্যু মজনু এবং ইলিয়াস বাহিনীর সদস্যদের পর পর্যায়ক্রমে মোট ১২টি বাহিনীর ১শ’ ৩২ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে। জমা দেয় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
এ ব্যাপারে র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘উপকূলীয় বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর কয়েক লাখ মানুষ সুন্দরবন ও সাগরের উপর নির্ভরশীল। মাছ, শুটকি, মধু, গোলপাতা, কাঁকড়া ও কাঠ সংগ্রহ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব পেশার মানুষ সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে থাকেন। অথচ কিছু বিপথগামী ব্যক্তি নিজ নিজ নামে বাহিনী গড়ে তুলে এই পেশাজীবীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধ করে আসছিল। সুন্দরবন ও সাগরের উপর নির্ভরশীল মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দস্যু দমনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে র্যাব-৮।’
র্যাব সূত্রে আরও জানা যায়, গত চার বছরে সুন্দরবনে বরিশাল র্যাব-৮ এর সঙ্গে দস্যুদের বন্দুকযুদ্ধে ১শ ৬৭ জন জলদস্যু ও বনদস্যু নিহত হয়েছে। নিহত ওই দস্যুদের মধ্যে ৩৮ জন রয়েছে বাহিনী প্রধান।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মৌসুম আসলেই সুন্দরবনের বনদস্যু বাহিনীগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় গত দুই বছর সুন্দরবন ও সাগরে চাঁদাবাজি ও অপহরণ অনেকাংশে কমে গেছে।’
জানা গেছে, আত্মসমর্পনকারী বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য অনুদান প্রদানের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও আরও উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, বাগেরহাটের চার সংসদ সদস্য: ডা. মোজাম্মেল হোসেন, তালুকদার আব্দুল খালেক, মীর শওকাত আলী বাদশা ও হ্যাপী বড়াল; পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সরকারের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।