জাতটির উদ্ভাবক ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের কৃষক এমদাদুল হক দুদু মিয়া জানান, এই জাতটি রোগবালাই-সহিষ্ণু ও উচ্চতায় খাটো হওয়ার কারণে ঝড় বা বাতাসে হেলে পড়ে না। পোকামাকড়ের আক্রমণও হয় কম। ধানটির চাল চিকন। ভাত খেতে সুস্বাদু। বাজার মূল্যও অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলনও ভালো।
দুদু মিয়ার ভাষ্য, নতুন জাতের এই ধানের প্রতিটি শীষে সাড়ে তিনশ থেকে চারশটি পর্যন্ত পুষ্ট ধান হচ্ছে, যা অন্যান্য ধানের শীষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এই ধানের গোছায় চিটা হয় না, তাই ফলন ভালো হচ্ছে। ধান থেকে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখতে অনেকটা বেগুনের বিচির মতো।
কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মাসুদ হোসেন, সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রীন চাষি মো. ইদ্রিস আলী, শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের সাহেব আলীসহ একাধিক কৃষক বলেন, ‘দুদু মিয়া কয়েক বছর ধরে নতুন ধানের আবাদ করছেন। অন্যদের জমিতে কোনও কারণে ধানের ফলন কম হলেও, তার নতুন জাতের ধানে ফলন ভালো হচ্ছে। তাই এই বছর তার কাছ থেকে ধানের বীজ নিয়ে আবাদ করেছি। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ধান বর্তমানে থোড় অবস্থায় আছে।’
এমদাদুল হক দুদু মিয়া বলেন, ‘গত বছর ধানের ফলন ভালো পেয়েছিলাম। এই ধান ঝিনাইদহের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমি এই বছর ১ হাজার কেজি ধানের বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক দুদুলতা ধানের আবাদ করছেন। সরেজমিনে কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখেছি, আমার কাছ থেকে নেওয়া ধান বীজের ক্ষেতে ধানের অবস্থা অত্যন্ত ভালো। আমি আশা করছি তারাও আমার মতো ফলন পাবেন। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে আমার কাছে অগ্রিম বীজের চাহিদা জানিয়েছেন। কাজেই এই বছরের তুলনায় আগামী বছর এই ধানের আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’
২০১২ সালে সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের কৃষক এমদাদুল হক দুদু মিয়া সুবললতা ধানের মধ্যে নতুন জাতের ধানের তিনটি গোছা আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে দুই বছর পরিচর্যার পর ওই ধানের বীজ তৈরি করে নিজের জমিতে আবাদ শুরু করেন তিনি।
২০১৭ সালে দুদু মিয়া তিন বিঘা জমিতে ১০০ মণ ধান উৎপাদন করেন। গত বছরের সাফল্যের পর এই বছর ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষক দুদু মিয়া বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে ধানের বীজ সরবরাহ করেছেন। এই মৌসুমে ওসব জমিতে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।