জুলু মোড়ল জানান, রমজান তাকে বলেছেন বিষয়টি নিয়ে যেন তিনি যেন বাড়াবাড়ি না করেন। রমজান টাকা ফেরত দিতে চেয়েছেন। আর সেই অপেক্ষায় রমজানের পথ চেয়ে বসে আছেন তিনি। রমজান এলাকাতে নেই। ফোন দিলেও ধরেন না। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন জুলু মোড়ল।
কালিয়ার মাউলি গ্রামের সাদিয়ার মুছল্লি (২৫) বলেন, ‘মালি পদে চাকরি দেওয়ার জন্য রমজান আমাকেসহ এলাকার আরও দুজনকে একসঙ্গে ঢাকার মিরপুর নিয়ে একটি হোটেলে রাখেন। দিনের বেলা মিরপুর সেনানিবাসের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে চা খেতে দেন। পরে সেখানে দুজন লোক এসে আমাদের একটি করে নিয়োগপত্র দেন। হোটেলে ফিরে আমরা ১১ লাখ টাকা দিই রমজানকে।’ সাদিয়ার মুছল্লি তার নিজের নিয়োগপত্রটি নিয়ে খুশিতে বাড়ি (নড়াইলে) ফিরে আসেন। ছেলের সরকারি চাকরি হয়ে গেছে তাই ভেবে খুশিতে আত্মহারা হন সাদিয়ারের বাবা কামরুল মুসল্লি । তিনি যে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন তা বসতভিটাসহ মাঠের জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিতে যোগদান দিতে গেলে জানতকে পারেন এটি ভুয়া সার্টিফিকেট। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন রমজান।
কলাগাছি গ্রামের এরশাদ শেখ জানান, তার ভাগনে আবু তাহের গাজী এবং শ্যালক হিরাঙ্গির গাজীকে সেনাবাহিনীর মালি পদে চাকরি দেওয়ার জন্য ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন রমজান। বিনিময়ে তাদের দুজনকে মালি পদে চাকরির দুটি নিয়োগপত্র দেন। নিয়োগপত্রে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী ঢাকা মিরপুর সেনানিবাসে গেলে সেনাবাহিনীর লোকেরা জানিয়ে দেন এই নিয়োগপত্র নকল। তার পর থেকে প্রতারক রমজানকে বিষয়টি জানালে পুনরায় সঠিক নিয়োগপত্র দেবেন বলে ঘুরাতে থাকেন।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীরা জানান, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন যুবকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ করে টাকা নিয়েছেন রমজান। বিনিময়ে এলাকার ১৯ জন যুবককে সেনাবাহিনীর মালি পদে নকল নিয়োগপত্র দিয়েছেন। বাকি লোকেদের নিয়োগপত্র দেবেন বলে ঘুরাচ্ছেন। খুলনা জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলার কয়েকজন যুবকের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রমজান সিকদারের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। রমজানের স্ত্রী আছিয়া খাতুন আসমা সাংবাদিকদের দেখে রেগে গিয়ে বলেন, ‘আপনারা কেন এসেছেন? আমার স্বামী ঢাকায় বেড়াতে গেছেন।’ এসময় রমজানের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রমজান সিকদার একটি ভিন্ন মোবাইল দিয়ে ফোন দিয়ে বলেন, ‘এলাকার লোকেরা তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।’