প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর অধীনে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তারা এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের কানাই গাজী ও তার ভাতিজা আলমগীর গাজীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের ঋষিপল্লীর বিধবা জোসনা বিশ্বাস (৪৫) বলেন, ‘ আমার স্বামী প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে মারা যান। বাঁশ দিয়ে স্বামীর নির্মাণ করা টিনের দু-চালা একটি টিনের ছোট ঘর থাকলেও সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ঘরটি কখনও মেরামত করতে পারিনি। গত এক সপ্তাহ আগে একই গ্রামের মৃত আবদুল হামিদ গাজীর ছেলে বিল্লাল গাজী ওরফে কানাই গাজী আমার ঘরে আসে। সে তাকে ১৫ হাজার টাকা দিলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক লাখ টাকা মূল্যের একটি ঘর আগামী দুই মাসের মধ্যে তৈরি করে দেওয়া হবে বলে জানায়। পরে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক শতকরা ১০ টাকা হারে ৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কানাই গাজীকে দেই।বাকি টাকাও ধার-দেনা করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
মাটিকাটা শ্রমিক ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের হাসান শেখের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে টিনের তৈরি একটি কাঁচা ঘরে কোনো রকমে বসবাস করি। ভালো একটি ঘর পাওয়ার আশায় কানাই গাজী ও তার ভাতিজা আলমগীর গাজীকে অগ্রিম ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি ১০ হাজার টাকা ঘর পাওয়ার পর দেবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
কালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যাদের জমি আছে, ঘর নেই এ প্রকল্পের আওতায় অসহায় লোকের মধ্যে সরকারিভাবে বিনা খরচে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী দফতর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত কোনও বরাদ্দ আসেনি। এ উপজেলায় গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩২টি ঘর বরাদ্দসহ এ প্রকল্পে মোট ১৯৭টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের খবু গাজীর ছেলে ও দালাল কানাই গাজীর ভাতিজা আলমগীর গাজী টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,‘আমার চাচার জামাই (চাচাতো বোনের স্বামী) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার শাহজাহানের ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ৫৫ জন অগ্রিম বাবদ সর্বনিম্ন ৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন। আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যে টাকা প্রদানকারীদের চৌদ্দ হাত লম্বা ও ৬ হাত চওড়া সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত শাহজাহান নিজেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার বাসিন্দা সাজ্জাদ দাবি করে বলেন,‘মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য খরচ বাবদ কিছু টাকা তোলা হচ্ছে। তবে যারা টাকা দিচ্ছেন, তারা নিশ্চিতভাবে ঘর পাবেন।’
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদা বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পে জমি আছে, ঘর নেই আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় দরিদ্র মানুষদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের নাম করে যদি কোনও ব্যক্তি টাকা-পয়সা নিয়ে থাকে, সেই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’