যে কারণে সুন্দরবন ও মোংলার নদীতে পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশ

01সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালসহ মোংলার পশুর নদী থেকে একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ আসতো মোংলা বাজারে। এখানকার ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারতেও যেতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এসব নদীতে এখন আর আগের মতো ইলিশ পাওয়া না যাওয়ায় হতাশ জেলেরা। গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ না আসা, পর্যপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কারণেই মোংলাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে ইলিশের দেখা নাই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই কথা বলেছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারাও।

স্থানীয় জেলে-ব্যবসায়ীরা জানায়, এক সময়ে ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনে এখন আর আগের মতো ইলিশ মিলছে না। সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে ইলিশের আকাল চলছে। ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও এখন পর্যন্ত জেলেদের জালে ইলিশের তেমন দেখা মিলছে না। জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র হতাশা বিরাজ করছে। এ অঞ্চলের হাট-বাজারগুলো এখন মূলত ইলিশ শূন্য রয়েছে।

02উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নদীতে ইলিশ না পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে গবেষণামূলক তথ্য না থাকলেও মনে হচ্ছে গভীর সমুদ্র (বঙ্গোপসাগর) থেকে ইলিশ না আসায় নদীতে জেলেরা ইলিশ পাচ্ছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আমাদের নদীতে ইলিশের আকাল দেখা দিতেও পারে।’

তবে, আগামী ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার আগেই মোংলার নদীতে ইলিশের ছড়াছড়ি হবে বলে আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) স্থানীয় সমন্বকারী ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার নুর আলম শেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্দরে আসা বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে বর্জ্য ফেলায় নদী দূষন এবং সুন্দরবনের বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কারনে ইলিশের আকাল পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবনে বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিষ দিয়ে মাছ করছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে এবং আইন মেনে বাণিজ্যিক জাহাজের বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানান তিনি।

জেলে সূত্র জানায়, চলতি ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নেয়। মহাজন ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জাল-নৌকাসহ খাওন -খোরাক গোছগাছ করে জেলেরা নদীতে নেমেছে। কিন্তু সুন্দরবন এলাকার পশুর, বলেশ্বর, কচা, শিবসা , পানগুছি ও বিষখালী নদীতে এখন পর্যন্ত ইলিশের দেখা মিলছে না।

স্থানীয় জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল জানান, সুন্দরবন উপকূলের এ সব নদ-নদীর ইলিশের ওপর নির্ভর প্রায় এক লাখ জেলে পরিবার। চলতি ভর মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ায় জেলে পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র হতাশা।

তিনি আরও জানান, দিন-রাত জাল ফেলে ও নদীতে দাপিয়ে দু’একটি ইলিশ ধরা পড়লেও তা আকারে ছোট। ইলিশের দেশখ্যাত সুন্দরবন উপকূলের হাট-বাজারেও তেমন ইলিশ উঠছে না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. গাউছিয়াতুর রেজা বানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নদী দূষন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নদীর গভীরতা না থাকায় সাগর থেকে ইলিশ আসছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইলিশ সাধারণত গভীর সমুদ্রে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু মোংলা ও সুন্দরবনের নদী সহনীয় পর্যায়ে না থাকায় ইলিশ আসছে না। ইলিশ রক্ষায় প্রাথমিকভাবে নদী শাসন করতে হবে এবং এটা নিয়ে আরও গবেষণা করে ইলিশ সুন্দরবনের নদীমুখী করতে হবে। ’