কালিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন, সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও কালিয়া পৌরসভা নিয়ে নড়াইল-১ আসন। এ আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে একাধিক প্রার্থী দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। পাশাপাশি শরিক দলের নেতারাও প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছেন। ‘আওয়ামী লীগের দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত আসনটিতে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে ক্রমেই বাড়ছে দলীয় কোন্দল। বিএনপিতেও আছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী, যা নিয়ে এ দলটিতে রয়েছে অস্বস্তি।
নড়াইল-১ আসনে বর্তমান এমপি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের কবিরুল হক মুক্তি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার পর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে থাকে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রাখতে চায়। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দিনে যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তারা এলাকার উন্নয়নে তেমন কোনও ভূমিকা রাখতে পারেননি। যার কারণে এমপি প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ চাচ্ছেন তারা।
এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, আওয়ামী লীগ নেতা লে. কমান্ডার (অব.) ওমর আলী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক কাজী সরোয়ার হোসেন এবং শরীক জোট জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি (আম্বিয়া-প্রধান) শরীফ নূরুল আম্বিয়া।
বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে একাধিকবার নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে। এলাকার উন্নয়নে আমি যথেষ্ট কাজ করেছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারও আমি নির্বাচিত হয়ে প্রতিশ্রুত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করবো।’
আওয়ামী লীগ নেতা লে. কমান্ডার (অব.) ওমর আলী জানান, তৃণমূল মানুষের পাশে থাকার জন্যই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকছেন। মাদ্রাসা-মসজিদ নির্মাণ, গরিব রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়, অসহায়দের সহযোগিতার পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সামাজিক কাজে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। এলাকাবাসীর যেকোনও সমস্যায় পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। আসন্ন নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জনগণের দোয়া-অর্শিবাদ ও ভালোবাসা নিয়ে দলীয় প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সেবা করতে চান।
মুফতি রুহুল আমীন বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা যদি আমাকে নমিনেশন দেন, ইনশাআল্লা, আমি নৌকা প্রতীকে বিজয় লাভ করে উন্নয়নের জোয়ারে কালিয়া ভাসিয়ে দেবো। মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো এবং এলাকার মানুষকে শতভাগ শিক্ষায় উন্নীত করবো। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সবচেয়ে নিরাপদে থাকবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলুও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র নিলু খান বলেন, ‘নড়াইল হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে আছি।’
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি (আম্বিয়া-প্রধান) শরীফ নূরুল আম্বিয়া এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। কালিয়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি আকতার হোসেন রাঙ্গাও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, প্রয়াত সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ সাহার ছেলে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অধ্যক্ষ সুকেশ সাহা আনন্দ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান সুজা।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হলে অবহেলিত কালিয়া তথা গোটা জেলার সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো।’
জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম দলীয় নমিনেশন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ও ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন।
জেলা বিএনপির উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক নেতা অধ্যক্ষ সুকেশ সাহা আনন্দ বলেন, ‘২০০৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত একটানা ১১ বছর কালিয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি থাকার সুবাদে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
বিএনপি নেতা সাজেদুর রহমান সুজা বলেন, ‘নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি। শুধু দল করার কারণে বার বার কারাবরণ করতে হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকতে চাই।’
এ ছাড়া, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হিসেবে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিল্টন মোল্যার নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ খবিরুদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছে।
নড়াইল-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪০ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার একলাখ ১৮ হাজার ৬শ’ ৮৯ জন এবং মহিলা ভোটার একলাখ ২১ হাজার ৩শ’ ২৫ জন।