‘এক বছর হয়ে গেলো আমার আম্মু চলে গেছে’

মুক্তামনি, ফাইল ছবিরক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুক্তামনির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল রবিবার (১২ মে)। মিলাদ, মাহফিলের মাধ্যমে মুক্তামনির পরিবার তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের একটি মসজিদে মুক্তামনির জন্য ইফতার ও দোয়ার আয়োজনও করা হয়।

মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেলো আমার আম্মু মুক্তামনি চলে গেছে। আমার আম্মুর আজ (রবিবার) প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আম্মু ইংরেজি মাসের ২৩ মে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেদিন ৬ রোজা ছিল। সেজন্য ৬ রোজা আম্মুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করলাম। আজ আমাদের এলাকার একটি মসজিদে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। বাড়িতে কিছু ফকির-মিসকিনকে খেতে দিয়েছি। আমাদের আদরের ধনকে (মুক্তামনিকে) হারানোর শোক ভুলতে পারি না।'

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মুক্তামনির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশ-বিদেশের অনেকে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং আমাদের সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে সামন্ত লাল সেন ও আবুল কালাম আজাদ স্যারসহ সবার সর্বোচ্চ চেষ্টার পর তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আমার আম্মুর চিকিৎসার কমতি ছিল না। এতে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন সবার কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ যেন ওকে জান্নাত দান করেন।’

মুক্তামনির মা-বাব ও ভাই-বোনপ্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ‘মুক্তামনির কী অসুখ জানেন না চিকিৎসকরাও!’ এই শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে একটি খবর প্রকাশিত হয়। পরে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আসে। বিষয়টি নজরে আসার পর অনেকে মুক্তার চিকিৎসায় হাত বাড়ান। পরে মুক্তামনির চিকিৎসার সব ধরনের খরচের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ওই বছরের ১২ জুলাই রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামনির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেকের চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তামনির হাতে ৫ আগস্ট  প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। প্রথমে তার হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়।

ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামনির হাত আবার ফুলে যাওয়ায়, ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এক মাসের ছুটিতে বাবা-মার সঙ্গে মুক্তামনি নিজ বাড়িতে ফেরে।

এর পাঁচ মাস পর ২০১৮ সালের ২৩ মে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের বাড়িতে মারা যায় মুক্তামনি।