রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে খুলনায় শতাধিক প্রতিমা

01খুলনায় এ বছর বড় দুর্গোৎসব আয়োজন হয়েছে ঠিকরাবন্দ নিজখামার সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের মণ্ডপে। এ মণ্ডপে রামায়ণ-মহাভারতের পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে শতাধিক প্রতিমা। এখানে প্রতিদিন দুপুর থেকে থাকবে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঠিকরাবন্দ-নিজখামার সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এবার জেলার সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে বলে দাবি করেন কমিটির সম্পাদক সুরঞ্জন সুতার।

খুলনা জুড়েই এবার রয়েছে নানা ধরনের আয়োজন। ডুমুরিয়া কেন্দ্রীয় মঠ মন্দির, চুকনগর বাজার মাতৃমঙ্গল মন্দির, কপিলমুনি কালীবাড়ী মিলন মন্দির, সরল সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরসহ বেশ কিছু মন্দিরে রয়েছে ভিন্ন ধর্মী আয়োজন। বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির পূজা আয়োজনতো আছেই। সেখানে এবার আট শতাধিক প্রতিমা তৈরির খবর জনমুখে রয়েছে।

02এবার খুলনা বিভাগের ৪ হাজার ৭৪৫টি মণ্ডপে চলছে দুর্গা পূজার আয়োজন। এর মধ্যে মহানগরের ১২৯টিসহ খুলনা জেলার ৮৬৯টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ বছর খুলনা জেলার রূপসায় ৭২টি, তেরখাদায় ১০৪টি, দিঘলিয়ায় ৬০টি, কয়রায় ৫৯টি, পাইকগাছায় ১৪৯টি, দাকোপে ৮০টি, ফুলতলায় ৩১টি, ডুমুরিয়ায় ১৯৬টি এবং বটিয়াঘাটায় ১১৮টি মণ্ডপ রয়েছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে খুলনা অঞ্চলে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে প্রতিমা রাঙানোর কাজ। উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনাসহ পুরো বিভাগে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু এবং ৪ অক্টোবর ৬ষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনার কেন্দ্রীয় আর্য ধর্মসভা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শিবু ভট্টাচার্য জানান, এবারে দেবী দুর্গা আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) এবং ফিরবেনও ঘোটকে । দেবীর এ (ঘোড়ায়) আগমনে “ছত্রভঙ্গ সুরঙ্গমে” অর্থাৎ দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হানাহানি, সামাজিক বিশৃঙ্খলতার বার্তা রয়েছে বলে ধর্মীয় বিশ্বাস।

03তিনি আরও জানান, আর্য ধর্মসভা মন্দিরে সব ধরনের নিরাপত্তা রয়েছে এজন্য এখানে প্রতিবছর পূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের চতুর্দিকে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শ্যামল হালদার জানান, শঙ্কা থাকলেও পূজার সার্বিক প্রস্তুতি ভালো। ইতোমধ্যে প্রতিটি থানায় থানায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সভা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি কৃষ্ণপদ দাস জানান, এ বছরের পূজা আয়েজনে খুলনায় প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। জেলায় এবার ১৪টি মণ্ডপ বেড়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সন্তোষজনক। এই উৎসব নিয়ে তাদের কোনও শঙ্কা নেই।

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খ. মোহিদ উদ্দিন বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য বিভাগে পুলিশের পাশাপাশি র্যািব, চেক পয়েন্ট, মোবাইল টিম, আনসার, কমিউনিটি পুলিশ, চৌকিদার এবং স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এছাড়া সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য থানা, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে কট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’

রূপসা মহাশ্মশান কালী মন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি সিধু চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতিমায় চলছে দো-মাটির কাজ।’

পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক কৃষ্ণপদ দাস বলেন, ‘প্রত্যেক মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন রাঙানোর কাজ চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। এখনও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

ডিআইজি কার্যালয়ের মিডিয়া সমন্বয়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. শরফুদ্দিন বলেন, ‘প্রতি পাঁচটি মণ্ডপের জন্য একজন অফিসার নিয়োজিত থাকবে। সব মণ্ডপ ও চলাচলের সড়কে পর্যাপ্ত আলো এবং বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।’