জানা যায়, খুলনা মহানগরীর টুটপাড়ার কবরস্থানের পূর্ব পাশে প্রায় শত বছর আগে একটি বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন তৎকালীন জমিদার দীননাথ সিংহ। ওই সময় এ বাড়িতে একজন তরুণীসহ পরপর কয়েকজনের অপঘাতে মৃত্যু হয়। এ কারণে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়। এরপর থেকে বাড়িটাকে সবাই ‘ভূতের বাড়ি’ বলে আখ্যা দেন। এখানে এক পর্যায়ে আনসার ক্যাম্প করা হয়। ৭১ সালে এখানেই গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম রাজাকার ক্যাম্প।
খুলনার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবীর ববি এ বাড়ি বিষয়ে বলেন, ৭১-এ বাড়িটিতে হানাদার বাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্র, যুব ও শ্রমিক ফ্রন্টের সদস্যদের নিয়ে সর্বপ্রথম রাজাকার ট্রেনিং শুরু করে। পরে এই কুখ্যাত ক্যাম্পে জামায়াতে ইসলাম ও পাকিস্তানপন্থীদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। এরা খুলনা এবং খুলনার পার্শ্ববর্তী সব হিন্দু ও আওয়ামী লীগ প্রভাবিত গ্রামগুলোতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গিয়ে এক অচিন্তনীয় মহাত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া ও চাঁদাবাজিসহ এমন কোনও অপকর্ম নেই, যা তারা করতো না। এই ক্যাম্পে প্রতিদিন শত শত যুবকদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করা হতো।
হুমায়ুন কবীর ববি বলেন, এই ভূতের বাড়িটি মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, জামায়াত ও মুসলিম লীগসহ দক্ষিণপন্থী দলগুলোর হাজারো কুকীর্তির সাক্ষী।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু জাফর, মনোয়ার আলী ও তকিম আহমেদ জানান, বাড়িটি এখন ধ্বংসের মুখে। এটা সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ নেই। সামনে থেকে লোক দেখানোর মতো বাড়িটাকে কিছুটা পলিশ করে রাখা হয়েছে। তবে পেছন দিক এবং ভেতরের অবস্থা ভয়াবহ।
তারা জানান, অনেক আগেই বাড়িটি পরিত্যক্ত ও বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে বাড়িটি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছে। ওই ভবনেই তাদের অফিস। তবু প্রায় শতবর্ষের স্থাপনা ও মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ নেই। বরং বাড়িটিকে ধ্বংস করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে স্থুলভাবে।
অথচ দোতালার ছাদে উঁচু ট্যাপ থেকে জোরালোভাবে পানি পড়ছে। সরু ধারায় সে পানি দোতালা থেকে পেছন দিকে মাটিতে পড়ছে। ফলে দোতালার ছাদে সবসময় পানি জমে থাকে। ঘরের মেঝে ভাঙাচোরা, ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে এবং নোংরা। ভবনের নিচের একটি কক্ষে আনসার ভিডিপির গোডাউন রয়েছে। এখানের দোতলার একটি কক্ষে ২০১৬ সালে আনসার সদস্যরা বসবাস করতেন।
খুলনার নাগরিক নেতাদের দাবি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত, কালের সাক্ষী বাড়িটিকে যথাযথ মর্যাদায় টিকিয়ে রাখা হোক।
আনসার ভিডিপি খুলনা রেঞ্জের পরিচালক মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন, ভবনটি পিডব্লিউডি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছে। এখন আমাদের তেমন কোনও বাজেট না থাকায় এটি সংরক্ষণের কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছি না। আর সংরক্ষণ বা মেরামতে সরকারেরও কোনও দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।